হাসিনা-মোদি ভিডিও কনফারেন্স দুই প্রকল্প, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন

ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং দুই দেশের রেল যোগাযোগ বাড়াতে গৃহীত পৃথক দুটি মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক  উদ্বোধন করা হলো। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে যৌথভাবে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কনফারেন্সে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে মোদি হিন্দিতে বক্তব্য শুরু করলেও শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বাংলায় বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম। আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো।’ বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ইতিহাসের ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেন নরেন্দ্র মোদি। জানা যায়, নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট আসবে ভারতের সরকারি খাত ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ থেকে। ২০০ মেগাওয়াট আসবে সে দেশের বেসরকারি খাত ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন’ থেকে।

বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুক্ত হয়েছে।এ ছাড়া ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্র ও রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান প্রায় ১৬ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লিঙ্ক। এটি ফের চালু করতে নেয়া সংস্কার প্রকল্প এবং আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রকল্প দুটির বেশিরভাগ কাজ বাস্তবায়িত হবে ভারত সরকারের দেয়া ঋণ সহায়তায়।

ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা শুরু: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্তঃবিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে। সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হওয়ার পর ভারত থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াটে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সোমবার বিকালে হলেও রোববার মধ্য রাত থেকেই পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হয়েছে।

এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ‘হাই ভোল্টেজ ডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশনের দ্বিতীয় পর্যায়েরও উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশ এবং মৌলবীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় ২০১৩ সালের ৫ই অক্টোবর। ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ।

এছাড়া ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা হয়ে আসছে আরও ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধন হওয়া আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ হবে। এ প্রকল্পের ৪৭৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ হিসেবে দেবে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারই যোগাবে। রেলপথের পাশাপাশি কালভার্ট, প্যাসেঞ্জার প্লাটফর্ম, প্লাটফর্ম শেড, কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ভবন এবং পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের রেল যোগযোগ সহজ হবে। রেলপথে ত্রিপুরা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে ৫১৫ কিলোমিটারে। আর কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুরের মধ্যে ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন কাজে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৫৫৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা; আর ১২২ কোটি ৫২ লাখ ৩ হাজার টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। এ প্রকল্পের অধীনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে রেলসেতু, স্টেশন ভবন, প্লাটফর্ম, রেললাইন এবং অন্যান্য রেল অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।

‘আপনি জিতুন, আমরা আবার আসব’:  শেখ হাসিনার কাছ থেকে সফরের আমন্ত্রণ পেয়ে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় প্রত্যাশা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে কলকাতা থেকে যুক্ত হয়েছিলেন মমতা। ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নয়া দিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প দুটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

দুজনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে আবার আসেন বেড়াতে, সেটাই চাই।’ তখন মমতা বলেন, ‘নিশ্চয় আসব। আপনি জিতুন, আমরা আসব আবার।’ বাংলাদেশে এই বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সোমবার উদ্বোধন করা দুটি প্রকল্পের একটি ছিল ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের আমদানি নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্তঃবিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডের উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রত্যাশা করেন। নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্কে থাকা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাজি আছি। গভর্মেন্ট ওইদিক থেকে ক্লিয়ারেন্স দিলেই আমরা করে দেব। কাজে লাগলেই ভালো।’ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আমন্ত্রণ পেয়ে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ দেখান এই বিজেপি নেতা। বিপ্লব বলেন, ‘আমি আসব আপনার কাছে।’ কবে, শেখ হাসিনা জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, ‘আমি কোনো একটা কারিকুলাম বানিয়ে আসব। আপনার কাছেই আসব।’ বাংলাদেশের চাঁদপুরের কচুয়ার সন্তান বিপ্লব এই বছরের শুরুতে ত্রিপুরা রাজ্য নির্বাচনে বিজেপিকে জয়ী করে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তার বাবা-মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *