দেশের ফুটবল অঙ্গনে ‘ওস্তাদ’ ওয়াজেদ গাজী আর নেই

দেশের ফুটবল অঙ্গনে ‘ওস্তাদ’ নামে খ্যাত জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ ওয়াজেদ গাজী আর নেই। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় যশোর শহরের ওয়াপদা এলাকায় মেয়ের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। দেশবরেণ্য এই ফুটবল কোচের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকাল থেকে যশোরের ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তার বাড়িতে ভিড় জমান।
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার বাদ জোহর যশোর ঈদগাহ মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের পক্ষ থেকে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
১৯৫৮ সালে স্পোর্টিং ইউনিয়নের হয়ে কলকাতা লিগে অভিষেক হয় কিশোর ওয়াজেদ গাজীর। সেসময় কলকাতা স্পোর্টিং ইউনিয়নের হয়ে জুনিয়র ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দিতেন রমণী সরকার। ১৯৬৩ সালে কলকাতা মোহামেডানে খেলেছিলেন। তারপর ফিরে আসেন দেশে।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিজি প্রেসে চাকরি নেন। তারপর ওয়ান্ডারার্স, ইপিআইডিসি (পরে বিজেএমসি), মোহামেডানে খেলে ৭৬ সালে ফিরে আসেন ওয়ান্ডারার্সে। পাঁচবার ছিলেন ঢাকা লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। তবে ১৯৭৭ সালে ঢাকার মাঠ ছাড়লেও যশোর জেলা দলের হয়ে খেলেছেন আশির দশকের শেষ পর্যন্ত।
১৯৭৮ সালে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তার। তখন যশোর ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন ইউনিট টিমকে অনুশীলন করান। রহমতগঞ্জের মোহাম্মদ আমিন ওয়াজেদ গাজীর জীবনের বাঁক বদলে দেন। পুরান ঢাকার ক্লাবটির কোচের দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮৩ পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। পরের দুই মৌসুম ছিলেন আরামবাগে।
১৯৮৬ থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার কোচ ছিলেন। ১৯৮৭ সালে জাতীয় দলের কোচও হয়েছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। পরের বছর তার ঠিকানা হয় ফরাশগঞ্জে। ১৯৯০ সালে আরামবাগে ফিরেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ছিলেন আরামবাগের কোচ। দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের প্রায় অর্ধেকটাই আরামবাগে কাটানোর পর ২০০৩ সালে যোগ দেন শেখ রাসেল।
তারপর ব্রাদার্স, বিজেএমসি হয়ে আবারও আরামবাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ওস্তাদ ওয়াজেদ গাজী। ৬০ বছর কাটিয়েছেন ক্লাব পাড়ায়। প্রত্যেক বছরেই দলগুলো তাকে কোচিং করানোর প্রস্তাব দিত। তিনি কখনোই কারও মুখাপেক্ষী হতেন না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাকে মূল্যায়ন না করলেও ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা তাকে সেরা কোচের পুরস্কার দিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *