নারায়ণগঞ্জে ৩ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা বাসের সুপারভাইজারের খোঁজ মিলছে না

রূপগঞ্জের পূর্বাচল থেকে শুক্রবার ভোরে ৩ ঝুট ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সফিউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহতদের স্বজনদের বাদ দিয়ে পুলিশ কেন মামলা করলো এমন প্রশ্নে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক সেকান্দার আলী বলেন, তারা কেউ থানায় যোগাযোগ না করায় বাধ্য হয়ে পুলিশ মামলার বাদী হয়েছে।

নিহতদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ এবং মুন্সীগঞ্জে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকলেও রূপগঞ্জ থানা পুলিশের দাবি নিহত সবার বিরুদ্ধেই রাজধানীতে একাধিক মামলা রয়েছে। তবে রাজধানীর বনানী ও মুগদা থানায় যোগাযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে নিহত ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন এ তথ্য প্রকাশকারী পূর্বাশা বাস পরিবহনের সুপার ভাইজারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর ভোরে পূর্বাচল উপ-শহরের কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের আলমপুর ৯ নং সেতুর নিচে ৩ যুবকের মৃতদেহ পরে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে নূর হোসেন বাবু (৩২), ঝিনাইদহের সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গুড়েলা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদ (২৯) এবং রাজধানীর বনানী, মহাখালী দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে সোহাগ ভূঁইয়া (৩৪) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে।তাদের প্রত্যেককেই খুব কাছ থেকে মাথা ও বুকেসহ একাধিকস্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে নিহত শিমুল আজাদের কাছ থেকে ৬৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবু আত্মীয়। তারা রাজধানীর মুগদার মান্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। নিহত ৩ জনই সে এলাকায় পার্টনার হিসেবে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা করে আসছিলেন।

নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১২ই সেপ্টেম্বর শিমুল আজাদের গ্রামের বাড়িতে ৩ জন বেড়াতে যান। পরের দিন ঢাকায় ফেরার পথে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের সামনে বাসের ভিতর থেকে তাদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এ তথ্যর সত্যতা নিশ্চিত করেন পূর্বাশা বাস সার্ভিস পরিবহনের সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ১২ই সেপ্টেম্বর রাতে উল্লেখিত ৩ ব্যক্তি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার লাউতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে তার গাড়িতে উঠেন। ১৩ই সেপ্টেম্বর ভোরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১৫/১৬ ব্যক্তি তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।

এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আশরাফুলের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ঝিনাইদহ পূর্বাশা কাউন্টারের কর্মী সজিব জানান, আশরাফুলকে শনিবার ডিউটি করতে দেখা যায়নি। তার বাড়ি শহরের আমচারা এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে ঘর তালাবদ্ধ। শনিবার নিহতের স্বজনদের দেয়া মুঠোফোন নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশের দাবি, নিহত সোহাগ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় একটি হত্যা ও ৫টি মাদকের মামলা রয়েছে। শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবুর বিরুদ্ধেও বনানী থানায় একাধিক মাদকের মামলা আছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, গুড়েলা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদের নামে তার থানায় নতুন পুরনো কোনো মামলা নেই। একই দাবি করেছেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সকল রেকর্ড অনুসন্ধান করা হয়েছে। টঙ্গীবাড়ী থানা পাইকপাড়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে নূর হোসেন বাবুর নামে এ থানায় কোনো মামলা নেই।

এদিকে ওই তিন যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, নিহত নূর হোসেন বাবুর মাথায় দু’টি ও বুকের ডান পাশের পাঁজরে একটি, শিমুল আজাদের বুকে ও পায়ে ৫টি এবং সোহাগ ভূঁইয়ার মাথায় ও বুকে দু’টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। আসাদুজ্জামান আরো বলেন, সবক’টি গুলির চিহ্ন একই ধরনের। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যরাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *