ওপেনিং জুটি নিয়ে বাংলাদেশের হতাশা চরমে পৌঁছেছিল। শেষ ১২ মাসে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৭১ রান। আর শেষ শতরানের জুটিতো সেই দুই বছর আগে ২০১৬ ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তামিম ও ইমরুল কায়েস মিলে করেছিলেন ১০২ রান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপে তো ওপেনিং জুটির ব্যর্থ চরম আকার ধারণ করে। প্রথম ম্যাচেই তামিম ছিটকে পড়ায় পরপর তিন ম্যাচে লিটন কুমার দাসের সঙ্গী ছিল নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু শান্তর ব্যর্থতায় আসেন সৌম্য সরকার। কিন্তু তাতেও ফল আসেনি।তাতেও ফল আসেনি।
অবশেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নেন দুর্দান্ত এক সিদ্ধান্ত। ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে লিটনের সঙ্গী হন মেহেদী হাসান মিরাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যিনি ব্যাট করেছেন মিডল অর্ডারে। আর জাতীয় দলে লোয়ার মিডল অর্ডারে। কিন্তু চমক যেন ভারতের জন্যও চমক হয়ে আসে। এই দুজন ভুলিয়ে দেন দুই বছরের জমে থাকা হতাশা। তাদের ১২০ রানের জুটিতে দলে ছড়ায় প্রশান্তির হাওয়া। তবে তাদের এই দারুণ শুরু মান রাখতে পারেনি দল। মিরাজ ৩২ রানে আউট হলে ভেঙে ছিল স্বপ্নের জুটি। কিন্তু এরপর ছয় ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। শুধু মাত্র সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। তাতে শেষ দল গুটিয়ে যায় ২২২ রানে।
২০১৮ শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। আগের বছর তামিমের সঙ্গে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসের ব্যর্থতায় সুযোগ পেয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। ত্রিদেশীয় সিরিজে তামিম ও বিজয়ের জুটিতে শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই এসেছিল ৭১ রান। এমনকি এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রান ৩৫ তাও তামিম ও এনামুলের ব্যাট থেকে। এই বছর এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম ও লিটনের ওপেনিং জুটি ভাঙে মাত্র ১ রানে। পরের তিন ম্যাচে লিটন ও শান্ত জুটিতে আসে যথাক্রমে ১৫, ১৫ ও ১৬ রান। শান্তর ব্যর্থতাতে লিটনের সঙ্গী হতে আসেন সৌম্য সরকার। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের দু’জনের জুটিতে আসে মাত্র ৫ রান। বলতে গেলে এশিয়া কাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ দল পায় ৪ ওপেনার। এর মধ্যে শুধু লিটনের ব্যাট থেকে এসেছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১ রান। সেটিই ছিল তার ১৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়া সেরা সংগ্রহ।
এমন ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া ছিল দল। কিন্তু তারপরও লিটন দাসের উপর রাখা হয় চূড়ান্ত ভরসা। তাকে ফাইনালে খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়। তবে চমক হিসেবে সঙ্গী মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে দু’জন শুরু থেকেই খেলতে থাকেন সাবলিল। ধীরে ধীরে চড়াও হতে শুরু করেন দু’জন। শেষ ১২ মাসে ইমরুল ও তামিমের করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রানের জুটি টপকে যান। এরপর ছাড়ালো গেল এক বছরের সর্বোচ্চ ৭১ রানের জুটিও। সেখান থেকে তারা ২০১৬ তে ওপেনিং জুটিতে করা শতরানের জুটিও টপকে যান তারা। এই জুটিতে লিটন তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। সুযোগ ছিল মিরাজেরও কিন্তু হয়নি। তবে লিটন শেষ পর্যন্ত তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তার ব্যাট থেকে আসে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছয়ে ১২১ রানের দারুণ এক ইনিংস। বলতে গেলে শেষ পর্যন্ত নিজের যোগ্যতার প্রমাণ তিনি দিতে পেরেছেন ওপেনিং জুটিতে।