বগুড়া অফিস:
কলেজ সরকারি করণের জন্য মন্ত্রণালয়ে খরচের কথা বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন, ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ এবং জাতীয় দিবসে কলেজে উপস্থিত না থাকাসহ মোট ১০টি অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে গনমাধ্যমে মন্তব্য দিয়ে কলেজের কয়েকজন প্রভাষকরা পড়েছেন বিপাকে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে জাতীয় দৈনিক সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অধ্যক্ষ বলেছেন, কলেজের কতিপয় সুবিধাবাদী প্রভাষক/শিক্ষকরা বিএনপি-জামাতের লোক। স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় তারা মিথ্যা অভিযোগ ও গনমাধ্যমে মিথ্যা মন্তব্য করেছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের ‘মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজ’ নিয়ে চলছে হৈচৈ। কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠান সরকারি করণের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওই কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গত বুধবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ এবং জাতীয় দিবসে কলেজে উপস্থিত না থাকাসহ মোট ১০টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ইউএনওকে কলেজটিকে রক্ষারও দাবি জানিয়েছেন।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে নন্দীগ্রামে প্রতিষ্ঠিত মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে বর্তমানে অন্তত দুই হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সেখানে মোট ৫৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। কলেজটি সরকারিকরণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে পুরাতন এই কলেজের পরিবর্তে সম্প্রতি নন্দীগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয়।
ইউএনও বরাবর দাখিল করা অভিযোগে কলেজটি সরকারিকরণ না হওয়ার জন্য অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের অযোগ্যতাকে দায়ী করে বলা হয়, তিনি কলেজটি সরকারিকরণের জন্য দৃশ্যত কোনো চেষ্টাই করেননি। বরং সরকারিকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে খরচের কথা বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু বারবার চাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত তিনি ওই টাকা ফেরত দেননি।
অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ জাতীয় দিবসসমূহে যেমন- ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ আগস্ট কলেজে উপস্থিত থাকেন না।
কলেজের প্রভাষক মোকশেদ আলী জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সকলে এক জোট হয়েছেন। তিনি নিজেও অধ্যক্ষকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্যরা আরও বেশি টাকা দিয়েছেন। এরপরও কেন এ রকম হলো তা তারা জানেন না। কলেজের এই প্রভাষক বলেন, আমরা সত্য বলে বিপাকে আছি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কথা বললেই বলা হচ্ছে, তারা বিএনপি-জামাত। অথচ অধ্যক্ষ নিজেই বিএনপি কর্মী এবং বিএনপির নিয়োগপ্রাপ্ত।
এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার জানান, শিক্ষক কর্মচারীদের একটি অভিযোগ তিনি হাতে পেয়েছেন। এরপর বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তিনি চিঠি দিয়েছেন। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা অভিযোগ দায়েরের পর ওইদিনই নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করে তারা বিএনপি-জামাতের লোক। কলেজের কতিপয় সুবিধাবাদী প্রভাষক/শিক্ষকদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় তারা আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। কোনো টাকা লেনদেন হয়নি। তিনি কলেজটি জাতীয়করণে সব রকমের চেষ্টা করেছেন।