সপ্তাহব্যাপী গণসংযোগের তৃতীয় দিনে রাজধানীর গুলিস্তান, মিরপুর, নিউ মার্কেট ও আদাবর এলাকায় প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ
করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় নেতারা বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের বিকল্প নেই। নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোটের নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে নেতারা এ নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। জিরো পয়েন্ট ও গুলিস্তান এলাকায় গণসংযোগ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল। এসময় হানিফ বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল আছে, শুধুমাত্র নির্বাচন আসলেই যাদের তৎপরতা চোখে দেখা যায়। এই সমস্ত সুবিধাবাদী নেতারাই নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জোট ও ঐক্য গঠন করেন। কিন্তু তাদের লক্ষ্য নির্বাচনে অংশ নেয়া নয়। নির্বাচনকে ঘিরে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।যাতে কোনো একটা দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করা যায়। তাহলেই উনারা সেই সরকারের মন্ত্রী হতে পারবেন। এই লক্ষ্য নিয়েই তারা আজ জোটের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
দেশের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে হানিফ বলেন, প্রতিটি দেশেই সরকারের মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ অংশ নেবে। জনসমর্থন থাকলে সরকার আবারো ক্ষমতায় আসবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য। নির্বাচন আসলে এদেশে শুরু হয় নানামুখী চক্রান্ত। যারা ক্ষমতায় থেকে দেশকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় না নিয়ে, উল্টো জঙ্গিবাদের মাধ্যমে দেশকে সন্ত্রাসবাদী বানিয়ে ছিল, সেসব শক্তি এখন আবার তৎপরতা শুরু করেছে। তিনি বলেন, দেশে আবার কিছু দলছুট, নীতিহীন ও সুবিধাবাদী নেতা রয়েছে। তারাও নির্বাচন দেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জোট-ঐক্য গঠনের নামে তারাই দেশে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনার তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে তারা। তাদের সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা শুধু দেশের জনগণ নয়, বিশ্ববাসীর মুখেও ধ্বনিত হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ উপজেলাতেই এখন শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এই সফলতা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তার দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি একটি বড় দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কমকাণ্ড সব সময়ই জনগণের বিরুদ্ধে যায়। তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী থাকলেও লোভ সামলাতে পারেনি।
এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে এখন কারাগারে। আর সাজা হওয়ার ভয়েই অসুস্থতার অজুহাতে আদালতে যাচ্ছেন না তিনি। আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিএনপি সাত দফা দাবি পেশ করেছে। আমরা পরিষ্কার ভাবেই বলেছি, আপনাদের ৭ দফা দাবির বেশির ভাগই হচ্ছে অসাংবিধানিক। সংবিধানবহির্ভূত। আবার কিছু আছে আইনবহির্ভূত। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার আগে-পরে কোনো সময়ই বেগম জিয়ার জামিন দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। শুধুমাত্র আইনি লড়াই বা প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমেই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব।
বিএনপি’র জনসমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কতো মানুষের সমর্থন আছে তা নির্বাচন আসলেই দেখা যাবে। গত নির্বাচনে যোগ না দিয়ে বিএনপি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু এই নির্বাচনে তেমন ভুল না করে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এদিকে, রাজধানীর মিরপুরের বেনারসি পল্লী এলাকায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ করে আওয়ামী লীগ। গণসংযোগ থেকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সামপ্রদায়িক শক্তি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। দীপু মনি বলেন, আমরা সকলে মিলে সতর্ক থাকবো। নাশকতাকারীরা যেনো আর কোনো সংঘাত ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালাতে না পারে। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরাই এই গণসংযোগের মূল লক্ষ্য। এসময় প্রচারণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ নেতারা। এদিকে নিউ মার্কেট এলাকায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল এবং আদাবর এলাকায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে একটি দল গণসংযোগ করে। সন্ধ্যায় নিউ মার্কেট এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে কর্মসূচির চতুর্থ দিনে আজ মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে গঠিত টিম সকাল ১০টায় শাহবাগ এলাকায়, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এমপি’র নেতৃত্বে গঠিত টিম বিকাল ৪টায় আনন্দ সিনেমা হল, ফার্মগেট এলাকা এবং ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-এর নেতৃত্বে গঠিত টিম বিকাল ৪টায় বংশাল এলাকায় গণসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেবে। সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচির সমন্বয় করছেন দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।