চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানায় র্যাব’র অভিযানে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের পর দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আস্তানায় পাওয়া গেছে শক্তিশালী ৫টি গ্রেনেড, একটি একে-২২ রাইফেল ও দুইটি পিস্তলসহ বিপুল বিস্ফোরক। শুক্রবার দুপুরে র্যাব’র বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট আস্তানার ভেতর থেকে দুই জঙ্গির লাশ ও অস্ত্র উদ্ধার করে। যার মধ্য দিয়ে অভিযানও সমাপ্ত ঘোষণা করে র্যাব।
আর উদ্ধার করা দু’জনই পুরুষ বলে জানালেও তাদের নাম ও কোনোরকম পরিচয় জানাতে পারেনি র্যাব’র কর্মকর্তারা। তবে তারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সদস্য বলে জানিয়েছেন র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
অভিযান শেষে মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মিরসরাইয়ে এই আস্তানাটি গড়ে তুলেছিল জেএমবি’র জঙ্গি সদস্যরা। এমন তথ্য রয়েছে র্যাব’র হাতে।তবে র্যাব’র অভিযানে তাদের এই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
এর আগে বৃহসপতিবার রাত ৩ টার দিকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিনারা ঘেঁষে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার চিনকি রেলস্টেশনের অদূরে সোনাপাহাড় এলাকায় চৌধুরী ম্যানশন নামের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র্যাব-৭ এর সদস্যরা।
এ সময় বাড়ির ভেতর থেকে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এভাবে গোলাগুলির পর ভোর ৪টার দিকে বাড়িটির ভেতরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বাড়ির চালের একাংশ উড়ে যায়। ফলে র্যাব সদস্যরা বাড়ির ভেতর প্রবেশ না করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়।
শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে র্যাব’র বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযান জোরদার করে র্যাব। শুরুতে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল বাড়ির বাইরে একটি অবিস্ফোরিত বোমা খুঁজে পায়। পরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দুই জঙ্গির লাশ উদ্ধার করে। দু’জনেই ছিল পুরুষ জঙ্গি।
এরপর বাড়ির বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, পাঁচটি শক্তিশালী গ্রেনেড, একটি একে-২২ রাইফেল এবং দু’টি পিস্তল উদ্ধার করে। এরমধ্যে বিপুল পরিমাণ বোমা বাড়িটির পাশেই নিষ্ক্রিয় করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে টানা অভিযান। এরপর অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন র্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়াত জামিল ফাহিম।
তিনি জানান, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় চৌধুরী ম্যানশন নামে ওই বাড়িটি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। কিন্তু তাদের পরিচয় জানা নেই বাড়ির মালিকের। তাই বাড়ির মালিক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী ও তার কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
তবে বাড়ির মালিকের দেয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে তিনি বলেন, মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী কিছুদিন আগে ঘরসহ জায়গাটি কিনে নেন। টিনসেড সেমিপাকা বাড়িটির পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। ২৯শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ কেমসআরএম-এর কর্মচারী পরিচয়ে প্রথমে দু’জন এই বাড়ি ভাড়া নেয়।
পরে নারীসহ চারজন বাড়িটিতে ওঠে। কিন্তু অভিযানে দু’জন পুরুষের মরদেহ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে হয়তো নারীসহ দু’জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ফলে গোলাগুলি বা বিস্ফোরণে নিহত দুই জঙ্গির নাম-পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান র্যাব’র এই কর্মকর্তা।
সাফায়াত জামিল ফাহিম আরও বলেন, জঙ্গিরা এমন একটি স্পর্শকাতর জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে যেখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মাত্র ১০ গজ দূরে। মাত্র ১০০ গজ দূরে জোরারগঞ্জ চিনকি রেলস্টেশন। যেখান থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজেই নাশকতা চালাতে পারে।
তবে র্যাব’র গোয়েন্দা তথ্যমতে, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার টার্গেট নিয়ে তারা এই বাড়িতে আস্তানা গড়ে তুলেছে। গড়ে তুলেছে শক্তিশালী অস্ত্রের মজুত।
তিনি আরও বলেন, আস্তানা থেকে উদ্ধার করা একে-২২ রাইফেল এর আগে ঢাকার হলি আর্টিজেনের হামলায় ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। উদ্ধার করা গ্রেনেডের মতো গ্রেনেডও ওই হামলায় ব্যবহার করা হয়।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, মহাসড়ক ও রেলপথের কাছে হওয়ায় অভিযানের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল এবং রেলপথে রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে দুই ঘণ্টা পর ভোর ৫টার দিকে যানবাহন ও রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।