সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির জেরে রংপুরে দায়ের একটি মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম রংপুরের একটি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তাকে সেই পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
জেএসডির সহসভাপতি ও আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের উত্তরার বাসায় আসে। এ সময় তিনি জেএসডির পার্টি অফিসে ছিলেন। পুলিশ তাদের বাসা ঘিরে রেখেছে শুনে বাসায় ফেরেন তানিয়া।
বাসায় একসঙ্গে এত পুলিশ সদস্যের আগমনের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা বলেন, তারা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে নিয়ে যেতে এসেছেন। তানিয়া রব ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের যথাযথ নথিপত্র দেখানোর পর রাত ১০টার দিকে ওই বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আ স ম আব্দুর রবের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুল জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে উত্তরায় আ স ম আব্দুর রবের ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাসাটি ঘিরে রাখে পুলিশ। ওই বাসায় মইনুল হোসেন আছেন এমন খবর নিশ্চিত হয়েই পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়।
মইনুল হোসেনের ব্যক্তিগত সচিব রাজু আহমেদ জানান, সন্ধ্যার কিছু পর আ স ম রবের বাসায় যান মইনুল হোসেন। এ সময় রব বাসায় ছিলেন না। ১৫ মিনিট পর আ স ম রব বাসায় ফেরেন। এর কিছু সময় পরই পুলিশ বাসাটি ঘিরে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, জানতে চাইলে পুলিশ জানায় মইনুল স্যারের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। আ স ম রব পুলিশকে বলেন, তিনি বাসায় এসেছেন, একটু চা খেয়ে প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে চলে যাবেন। কিন্তু পুলিশ তা শোনে তাকে গাড়িতে করে ডিবি অফিস নিয়ে যায়।
ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শুরু থেকেই সক্রিয় ব্যারিস্টার মইনুল। রবসহ ফ্রন্টের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে বৈঠকে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
গত ১৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করে ব্যারিস্টার মইনুল তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই মন্তব্যের জেরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গত রবিবার ঢাকায় মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি।
এর পর একই অভিযোগে মইনুলের বিরুদ্ধে ভোলা, জামালপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রামে একটি করে এবং কুমিল্লায় দুটি মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে ঢাকা, জামালপুর ও কুড়িগ্রামের একটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল।
মাসুদা ভাট্টিকে সরাসরি অনুষ্ঠানে চরিত্রহীন বলার পর ওই মন্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করে ক্ষমা চান। অন্যদিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে গতকাল লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এসএম জুলফিকার আলী জুনু।
গতকাল গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির প্রসঙ্গটি ওঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্যারিস্টার মইনুলের আচরণের কড়া সমালোচনা করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এমন একটা জঘন্য কথা বললেন একজন নারী সাংবাদিককে এবং প্রকাশ্যে, সারা বাংলাদেশ কেন, সারাবিশ্ব দেখেছে, কীভাবে তিনি একজন নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ কথা বললেন। এখন কোর্ট যেখানে তাকে জামিন দিয়েছেন, সেখানে আমার কিছু বলার নেই। সে ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের নারী সাংবাদিক যারা আছেন, তারাই বা কী করছেন? একজন (ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন) নারীর বিরুদ্ধে বলেছেন, একটা মামলা না হয় হয়েছে, আরও তো মামলা হতে পারে। এর প্রতিবাদও আপনারা করতে পারেন। আপনারা প্রতিবাদ করুন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে।’
একাত্তরে মইনুল হোসেন পাকিস্তানি বাহিনীর ‘দালালি’ করেছেন বলেও গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী। একাত্তরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের হত্যাকা-ের জন্যও মইনুলকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে মইনুলের ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বর্তমান সরকারে পানি সম্পদমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। তবে তাদের দুই ভাইয়ের বৈরী সম্পর্কের বিষয়টি বেশ আলোচিত।