ভারতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে একটি সরকারী সংস্থা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) নামে ওই সংস্থা আর্থিক অপরাধ তদন্ত করে থাকে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মূলত ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টার অংশ ছিল এই অভিযান। তবে ইডি কর্মকর্তারা বলছেন, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগেই ওই অভিযান চালানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা’র মাধ্যমে বৈদেশিক অনুদান সম্পর্কিত বিধিনিষেধ এড়ানোর অভিযোগ এনেছে ইডি। অ্যামনেস্টি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভারতীয় আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বেশ কয়েকটি এনজিওর ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট এখন অ্যামনেস্টির ওপর আঘাত করেছে। আমাদের বেঙ্গালোর কার্যালয়ে ১০ ঘন্টাব্যাপী চালানো অভিযান শেষ হয় মধ্যরাতে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের কর্মীরা সরকারী কর্মকর্তাদেরকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন।আমরা পুনরায় বলতে চাই, আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভারতের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে ইডির অভিযান ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে এমন সংগঠনকে স্তব্ধ করতে সরকারের উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রমাণ পাওয়া যায়।’
অ্যামনেস্টির কার্যালয়ে অভিযানের আগে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিসের কার্যালয়ে একই ধরণের অভিযান চালায় ইডি। প্রসঙ্গত, বুধবারই অ্যামনেস্টি ভারত সরকারের প্রতি ভারত শাসিত কাশ্মীরে একটি বিস্ফোরনে ৭ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় ‘কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত’ শুরুর আহ্বান জানিয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তিবর্গ ও মানবাধিকার কর্মীদের বাছবিচারহীনভাবে আটক করার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে কর্মরত আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা ও দাতব্য সংস্থার প্রতি কঠোর আচরণ শুরু করেন। তার সরকার গ্রিনপিস সহ বেশ কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে সামাজিক ও পরিবেশগত জায়গা থেকে বিভিন্ন জাতীয় প্রকল্প বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগ আনে। ২০১৫ সালে মোদি সরকার গ্রিনপিসের বৈদেশিক অনুদান গ্রহণের অনুমতি প্রত্যাহার করে। সরকারের যুক্তি ছিল, শিল্প প্রকল্প বন্ধ করতেই ওই অর্থ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বৈদেশিক অনুদান প্রকাশ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে প্রায় ৯ হাজার সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে।