বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে যেসব মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে- তাতে কিছুই নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির পূর্বঘোষিত গণঅনশন কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া বিএনপির গণঅনশন শেষ হয় বিকাল ৩টার কিছু সময় পর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান। পরে তিনি একে একে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাসসহ অন্য নেতাদের পানি পান করান।এ সময় তিনি বলেন, সরকারের একটি সংকীর্ণমনা সিদ্ধান্তে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অস্বাভাবিক পরিবেশে রয়েছেন। তাকে সাজা দেয়ায় দেশে অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্ত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, তরুণ-তরুণীদের আন্দোলনের জন্য যে প্রস্তুতি রয়েছে তারচেয়ে তিন/চার গুণ প্রস্তুতি নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে কথা বলার কিছু নেই। এখন শুধু কাজের সময়। কারণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে একের পর এক মামলায় সাজা দিচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত মামলায় নতুন করে সাজা বাড়াচ্ছে সরকার। যেসব মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে তাতে কিছু নেই। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। এই দেশ এখন আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই। স্বৈরাচারী দেশে পরিণত করে ফেলেছে। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ তার ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার নির্বাচিত করতে চায়। আমরাও সেই রকম নির্বাচনের পরিবেশ চাই। আমরা দেশে এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই- যে নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে। কিন্তু সরকার পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেছে। আমাদের চেয়ারপারসনের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হলো। বিষয়টি নেত্রীকে জানানোর পর তিনি বলেছেন, সাজা যত দেয়ার দিক। তবুও মাথা নত করবো না। মির্জা আলমগীর বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বন্ধুগণ, আমরা মাথা নত করবো না। আমরা নিজেদের অধিকারের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তা আদায় করবো। এটা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার। ১৯৭১ সালের যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবোই করবো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দুইদিনে খালেদা জিয়ার মামলার রায় হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে দেশ আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই, স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের সঙ্গে খালেদা জিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র মানেই খালেদা জিয়া। তাই আজকে তার মুক্তির দাবিতে অনশন করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার একদিকে সংলাপের কথা বলে ব্যাপকভাবে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করছে। অন্যদিকে আমাদের নেত্রীর সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছে। এগুলো আমাদের কাছে ভালো আলামত বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আমাদের নেত্রী খালাস পাবেন। কিন্তু যা হয়েছে সেটি নজিরবিহীন। আমরা এটা গ্রহণ করবো না। দলের নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
গণঅনশনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, শুধু স্লোগান দিলে কি আমাদের নেত্রীর মুক্তি হবে? এসময় নেতাকর্মীরা না-সূচক উত্তর দেন। তাহলে কী করতে হবে? নেতাকর্মীরা বলেন- আন্দোলন আন্দোলন। পরে মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন। সেটি করলেই নেত্রী মুক্তি পাবে। আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মওদুদ বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের নেত্রীর মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
গণঅনশনে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করা হয়েছে। নতুন করে আরেকটি মামলায় ৭ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। এসব টিকবে না। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। সংলাপের নামে কোনো ধাপ্পাবাজি চলবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় গণঅনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আরা সাফা, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, শিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বক্তব্য রাখেন। গণঅনশনে বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল কৃষক দল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট ও শাখার হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক যোগ দেন। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং সাজা বাতিলের দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনের চত্বরে অনশন পালন করেন।