সিঙ্গাপুরে মরণব্যাধি এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাস এইচআইভি’তে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪২০০। এসব মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। ফলে ওইসব মানুষ এখন এক হতাশার মধ্যে বসবাস করছেন। এ খবর দিযেছে সিঙ্গাপুরের অনলাইন দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
৪৫ বছর বয়সী জি. চিউয়ের মতো মানুষরা সোমবার বলেছেন, এভাবে তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ায় তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত সুনাম দু’টোই ঝুঁকিতে পড়েছে। জি. চিউয়ের তথ্য ফাঁসের কথা তাকে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জি, চিউ একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমাকে নিয়োগকারী কোম্পানি অবশ্যই অবগত যে, আমার এইচআইভি আছে।
আমার কাছে যেসব বন্ধুবান্ধব জানতে চায় তাদেরকে প্রকাশ্যে বলে দিই বিষয়টি। কিন্তু আমার ভয়টা হলো, ব্যক্তিগত এসব তথ্য আমরা যেসব স্থানে কাজ করি সেখানকার সবার কাছে চলে যাবে। সাধারণ মানুষ জানবে। এখন ইন্টারনেটের দুনিয়া। সঙ্গে সঙ্গে এ খবর শেয়ার হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা দুনিয়া। যেসব মানুষের দেহে এইচআইভি আছে তাদের জন্য এটা একটা বড় বেদনা। আমি অবশ্যই চাইবো না যে, আমার এইচআইভি আছে এ কথা অনলাইনে থাকুক। এটা তো কোনো পুরস্কার বা পদক নয়।
জে নামের (ছদ্মনাম) ২০ উত্তীর্ণ একজন যুবতী এসব তথ্য ফাঁসের কথা শুনেছেন। এতে প্রথমেই তার মনে হয়েছে তার ৬০ বছর বয়সী মায়ের কথা এবং সামাজিক হয়রানি, অবিচারের বিষয়। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের পক্ষ থেকে এসব আসতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন, আমার শরীরে এইচআইভি থাকা একটি বিব্রতকর বিষয়। তবে যেহেতু এটা আছে, তাই বিষয়টি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয়। আমার এ খবরটি শুধু একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানে।
আরেকজন বলেছেন, আমার শরীরে যে এইচআইভি আছে সে সম্পর্কে মাকে কখনো বলি নি। বলার ইচ্ছাও নেই। আমি মেনে নিয়েছি যে, এইডস এমন একটি রোগ যাকে চিরজীবন আমার সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে হবে। তবে আমার ভয়, যদি এইসব তথ্য ফাঁস হয়, সাধারণ মানুষ জানতে পারেন, তাহলে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আমাকে একঘরে করে ফেলবে এবং হাসাহাসি করবে।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এইচআইভিতে আক্রান্ত মানুষের ওই তালিকার ১৯০০ মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছেন। মিসেস সি. কোহ (৩১) বলেন, তার সন্দেহ তার প্রয়াত ভাইয়ের নাম ওই তালিকায় আছে। তার ওই ভাইয়ের শরীরে এইচআইভি ধরা পড়ে ২০০৮ সালে। এরপর ২০১৬ সালে মারা যায় সে। এখন সেই ভাইয়ের নাম যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে তাহলে পরিবারের করণীয় কি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, আমার ভাই মারা যাওয়ার পর আমার পিতা ও আমি ভেবেছিলাম বিষয়টি বুঝি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তা আমাদের উদ্বেগ হলো, যে ডাটা ফাঁস হয়েছে তাতে আমাদের বাড়ির ঠিকানা রয়েছে। এ সব তো অনলাইনে অসংখ্য মানুষের নাগালে চলে যাবে। আর তা আমাদের জন্য হবে একটি বড় আঘাত।