দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন নৃত্যশিল্পী ডলি ইকবাল। তিনি জানিয়েছেন, বারিধারায় নিজ বাসায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় শাহনাজ রহমত উল্লাহ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকেন।
মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, আজ রোববার বাদ জোহর বারিধারার নয় নম্বর রোডের পার্ক মসজিদে শাহনাজ রহমত উল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর বনানীতে সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
শাহনাজ রহমত উল্লাহকে ১৯৯২ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনে আজীবন সম্মাননা, ২০১৩ সালে সিটি ব্যাংক থেকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া গান গেয়ে আরও অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের গানের জগতে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম শাহনাজ রহমত উল্লাহ। ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করা এ শিল্পী দশ বছর বয়স থেকেই গান শুরু করেন। প্রায় সেই বয়সেই গান করেন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন আর বেতারে। খেলাঘর থেকে শুরু করা এ শিল্পীর কণ্ঠ শুরু থেকেই ছিল বেশ পরিণত। গজল সম্রাট মেহেদি হাসানের শিষ্যা হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের দিকটা ধরতে গেলে সবার আগেই চলে আসে শাহ্নাজ রহমত উল্লাহর নাম। তাঁর ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন সুরকার, তাঁর আরেক ভাই চিত্র নায়ক জাফর ইকবালও করতেন গান। গানের ক্ষেত্রে তাঁদের মায়ের অনুপ্রেরণাই ছিল বেশি।
ক্যারিয়ারের ৫০ বছর পূর্তির সঙ্গে সময় থাকতেই গান থেকে বিদায় নেন তিনি। এ ছাড়া আরও একটি কারণ হলো ধর্মপরায়ণ জীবন বেছে নেওয়া। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ওমরাহ করে আসার পর আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। আমি নামাজ পড়া শুরু করেছি। নামাজ পড়েই সময় কাটছে। পঞ্চাশ বছরের ওপরে গান গেয়েছি, আর কত গাইব?’
১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ। গানের জগতে ৫০ বছরে শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমটি ছিল প্রণব ঘোষের সুরে ‘বারটি বছর পরে’, তারপর প্রকাশিত হয় আলাউদ্দীন আলীর সুরে ‘শুধু কি আমার ভুল’।
‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘কে যেন সোনার কাঠি’, ‘মানিক সে তো মানিক নয়’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’, ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘আরও কিছু দাও না’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’—এ রকম অসংখ্য গান দিয়ে তিনি বাংলাদেশের অগণিত শ্রোতার মন জয় করেছেন।