ডানহাতি পেসার শফিউল ইসলাম সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৬ সালের অক্টোবরে। গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে দিয়ে ৩ বছর পর ফিরলেন জাতীয় দলে। প্রত্যাবর্তনটা ভালোই হলো তার। ৯ ওভারে ৬২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন শফিউল। ডেথ ওভারে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতেই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন শেষ মুহূর্তে শফিউলকে দলে নিয়েছেন। প্রত্যাশা পুরোপুরি না পারলেও অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হন তিনি। তবে প্রধান বোলার মোস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাপূর্ণ। যদিও ২ উইকেট নেন ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত এ পেসার; কিন্তু ১০ ওভারে খরচ করেন ৭৫ রান! ইকোনমি রেট বিবেচনায় বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে খরুচে বোলার মোস্তাফিজ।
আরেক পেসার রুবেল হোসেন শুরুটা ভালো না করলেও শেষ পর্যন্ত ৯ ওভারে ৫৪ রানে ১ উইকেট নেন। অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৯ ওভারে ৫৬ রানে ১টি ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৭ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছেন সৌম্য সরকার। আরো একবার মূল বোলারদের লজ্জা দিয়েছেন সৌম্য। ৫ ওভারে ১৭ রানে ১ উইকেট নেন তিনি। সৌম্যর মতো আর দু’একজন বোলিং করতে পারলে শ্রীলঙ্কার দলীয় সংগ্রহটা ৫০ ওভারে ৩১৪ না হয়ে আরো কম হতো।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশি পেসারদের বোলিং ভালো হয়নি। মোস্তাফিজ টুর্নামেন্টে ২০ উইকেট নিলেও যথেষ্ট খরুচে ছিলেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও অনেক রান দিয়েছেন। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে ইনিংসের শুরুতে ব্রেকথ্রু খুব কমই দিতে পেরেছেন টাইগাররা বোলাররা। গতকাল আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুরুটা অবশ্য ভালো হয়েছিল বাংলাদেশের। দলীয় ১০ রানে আভিষ্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। কিন্তু এরপর আবার বোলিংয়ে দৈন্যদশা ফুটে ওঠে। দ্বিতীয় উইকেটে কুসাল পেরেরাকে নিয়ে ৯৭ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারেই শ্রীলঙ্কার দলীয় সংগ্রহ একশ’ পেরিয়ে যায়। দলীয় ১০৭ ও ব্যক্তিগত ৩৬ রানে মিরাজকে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান অধিনায়ক করুণারত্নে। তৃতীয় উইকেটে কুসাল মেন্ডিসের সঙ্গে ১০০ রানের জুটি গড়েন কুসাল পেরেরা। মারমুখী মেজাজে খেলতে থাকা পেরেরা তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওডিআই শতক। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ১১১ রানে সৌম্যর বলে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৯৯ বলের ইনিংসটিতে ছিল ১৭ চার ও এক ছক্কার মার। এরপর কুসাল মেন্ডিসকে (৪৩) ফেরান রুবেল। তবে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা থেমে থাকেনি। লাহিরু থিরিমান্নে-অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউ মিলে দলীয় সংগ্রহটা নিয়ে যান ২৭৫ পর্যন্ত। থিরিমান্নেকে (২৫) সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে এ জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। এরপর দ্রুতই থিসারা পেরেরাকে (২) সাজঘরে পাঠান শফিউল। তবে ম্যাথিউস খেলে যাচ্ছিলেন সাবলীলভাবে। দলীয় ৩০২ রানে মোস্তাফিজের বলে আউট হন তিনি। ফেরার আগে ৫২ বলে করেন ৪৮ রান। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ১২ বলে ১৮ রানের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৩১৪ রানে থামে শ্রীলঙ্কা।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কোনো দলই তিনশ’র বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি এর আগে। সর্বোচ্চ ২৮৬, যেটি ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাড়া করে জিতেছিল ভারত। বাংলাদেশ পেরেছে কিনা তা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন পাঠক।