আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বিরোধী দলের বিধায়ক (এমএলএ) অনন্ত কুমার মালো। তিনি বদরুদ্দিন আজমলের অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর প্রভাবশালী নেতা। অনন্ত কুমার একা নন, চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ আসামের বহু বিশিষ্টজন ব্যক্তি।
আর এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তার ভাষায়, এই এনআরসি নিয়ে ভাল কিছু আশা করা যাচ্ছে না। প্রকৃত নাগরিকরাই বাদ পড়েছেন।
এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর মতবিরোধ তৈরি হয়েছে খোদ বিজেপির মধ্যেই। অনেকেই মনে করছেন ওই তালিকায় বেআইনিভাবে নাম নথিভুক্ত হয়েছে অনেক অনুপ্রবেশকারীর। আর বাদ পড়েছেন প্রকৃত নাগরিকরা। এর আগে এই আশঙ্কা করে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকার পুনরায় নিরীক্ষণ করার আবেদন জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টে। যদিও সেই আর্জি খারিজ করে ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এনআরসি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেসও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রুটিমুক্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অমিত শাহ’র কড়া সমালোচনা করেছেন আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ। তিনি বলেন, এনআরসি যে প্রক্রিয়ায় তালিকা প্রকাশ করে তাতে অখুশি আমি। অনেক ভারতীয়র নাম বাদ পড়েছে। অনেক বিদেশির নাম নথিভুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তরুণ গগৈ। যার ফলে বেশি সমস্যা তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (আসু)-ও। তারা বলছে, এই তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে আসু। গতকাল চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন, এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় খুশি নই। এটি অসম্পূর্ণ এনআরসি হয়েছে। ত্রুটিমুক্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি বিপর্যয়। দেশবাসীকে জবাব দিতে হবে তাদের। দেশ ও সমাজের স্বার্থ পরিহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই ঘটে। তিনি আরও বলেন, বাংলাভাষী ভাই-বোনদের জন্য খারাপ লাগছে। জাঁতাকলে পড়ে ভুগতে হয়েছে তাদের।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ গতকাল আসামে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়। ওই তালিকায় বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। মোট ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছর যে খসড়া তালিকা প্রকাশ হয় সেখানে ৪০ লাখ ৭ হাজার মানুষের নাম বাদ পড়েছিল।