শীর্ষ বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। গত ২৫শে জুলাই এক ফোনকলে, সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ও অন্যান্য ডেমোক্রেট নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে একাধিকবার জেলেনস্কিকে চাপ দেন তিনি। বুধবার হোয়াইট হাউস ট্রামপ ও জেলেনস্কির ওই ফোনকলের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ করেছে। এই ফোনালাপ নিয়ে ট্রামেপর বিরুদ্ধে অভিশংসনের তদন্ত চালু হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ফোনকলের প্রতিলিপি অনুসারে, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ও রুডল্ফ জিউলিয়ানির সঙ্গে মিলে বাইডেন ও অন্যান্য ডেমোক্র্যাট নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রামপ। ফোনালাপে দুই নেতার মধ্যে সরাসরি সুবিধা বিনিময়ের কোনো কথা প্রকাশ পায়নি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন অনুদানের প্রয়োজন উল্লেখ করার পরপরই ট্রামপ তাকে এই প্রস্তাব দেন। এর কয়েকদিন আগেই ট্রামপ দেশটিতে ৩৯ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রামেপর ফোনালাপে অবশ্য ওই অনুদান বন্ধের বিষয়টি আলোচিত হয়নি। ঘোষণাটি সমপর্কে জানতেনও না জেলেনস্কি। তিনি তখন সবে ইউক্রেনের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। উল্টো ট্রামপকে ইউক্রেনে পূর্ববর্তী মার্কিন সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। জেলেনস্কির নতুন সহায়তা চাওয়ার জবাবে ট্রামপ বলেন, আমিও আপনার কাছে একটি বিষয়ে সাহায্য চাই। সাহায্য হিসেবে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষকে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল ও তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর সঙ্গে মিলে ডেমোক্র্যাটদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বলেন। তিনি বলেন, দেখুন, এ বিষয়ে আপনি কী করতে পারেন। সম্ভব হলে অবশ্যই করবেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রামেপর অনুরোধে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান জেলেনস্কি। বলেন, ইউক্রেনের নতুন শীর্ষ প্রসিকিউটরকে এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে বলবেন তিনি। বলেন, পরবর্তী প্রসিকিউটর জেনারেল শতভাগ আমার লোক হবে। তিনি পরিস্থিতিটি খতিয়ে দেখবেন।
উল্লেখ্য, বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে ট্রামেপর অভিযোগ, ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাইডেন ২০১৬ সালে ইউক্রেনের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলি ভিক্টর শোকিনকে বরখাস্তের দাবি জানান ও এতে সফলও হন। শোকিনের কার্যালয় থেকে ইউক্রেনিয়ান গ্যাস কোম্পানি বুরিজমা হোল্ডিংস-এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। তখন বুরিজমা হোল্ডিংস-এর বোর্ড পরিচালক ছিলেন জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন।
বাইডেন তখন চাপ দিয়ে ইউক্রেনের সরকারকে বলেন, ভিক্টর শোকিনকে সরান না হলে তাদেরকে ১ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ নিশ্চয়তা আমেরিকার দেয়ার কথা ছিল, তা দেয়া হবে না। ট্রাম্প ও অন্যদের অভিযোগ হলো, নিজের ছেলেকে বাঁচাতে এই চাপ সৃষ্টি করছিলেন বাইডেন। তবে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, জো বাইডেন দুর্নীতি করেছেন বা ইউক্রেনে নিজের ছেলের কাজের কারণে প্রভাবিত হয়েছেন। ট্রাম্প সেটিই খতিয়ে দেখতে জেলেনস্কিকে আহ্বান জানান।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের এই ফোনালাপ নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত চালু করেছে মার্কিন কংগ্রেস। আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে এই তদন্ত। তবে ট্রামেপর দাবি তিনি কোনো অপরাধ করেননি। এই পুরো বিষয়টি একটি ধাপ্পাবাজি। তিনি বুধবার বলেন, এটা একটা কৌতুক। এই ফোনকলের জন্য অভিশংসন?
তবে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নেতাদের দাবি অন্যরকম। তাদের অভিযোগ, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী-প্রত্যাশী বাইডেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিদেশি সাহায্য চেয়েছিলেন ট্রামপ। তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিশংসিত হতে পারেন ট্রামপ। যদিও জেলেনস্কির সঙ্গে তার ফোনালাপে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো অপরাধের প্রমাণ পায়নি ডেমোক্র্যাটরা। তবে এই বিতর্কে নিজ দলের অনেকের সমর্থন হারিয়েছেন ট্রামপ। রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনে বলেন, এই ফোনালাপের রেকর্ড খুবই উদ্বেগজনক। তার পক্ষেও কথা বলেছেন অনেকে। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, এই ফোনালাপের রেকর্ডে সাহায্য বিনিময় সমপর্কিত কিছু নেই। এদিকে সামপ্রতিক এই বিতর্ক নিয়ে বাইডেন বলেছেন, কংগ্রেসের উচিত ট্রামপকে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা। তবে তিনি সরাসরি অভিশংসনের আহ্বান জানাননি।
বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রামেপর সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান। ২৫শে জুলাইয়ের ফোনালাপ নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি সেটি একটি ভালো ফোনকল ছিল। আমরা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি রেকর্ড পড়ে থাকেন, তাহলে বুঝবেন যে, আমায় কেউ চাপ দেয়নি।