এই সরকার শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে। সংবিধানের কথা বলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ সারাজীবন গণতন্ত্রের উল্টো দিকটাই করে আসছে।’ গতকাল ময়মনসিংহের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সারা দেশে আমাদের কোথাও শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বুধবার এখানে সমাবেশের মঞ্চ করতে এলে পুলিশ বাধা দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। তাই আমি আজ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই এই ময়মনসিংহের সংগ্রামী মানুষদেরকে, যারা এই অল্প সময়ের মধ্যে সমাবেশকে লাখো মানুষের সমাবেশে পরিণত করেছেন। এই সমাবেশের কারণে প্রত্যেকটি জেলা উপজেলা থেকে দুইজন চারজন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য লাখো মানুষ এই সমাবেশে একত্র হয়েছে। এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে একটা মেসেজ দেয়া যে, আজ বাংলাদেশের মানুষ দেশনেত্রীর মুক্তি চায়। খালেদা জিয়া শুধু একটি দেশের মানুষের নেতা নন। তিনি এই দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের প্রাণের স্পন্দন। এই দেশের মানুষ মনে করে বেগম খালেদা জিয়া তাদের প্রতিনিধি। গণতন্ত্রের প্রতিনিধি, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধি। এই সরকার মনে করেছে খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে সবকিছু থেকে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু তারা জানে না বন্দুকের জোরে কেউ কোনো দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। আর খালেদা জিয়াকেও আটকে রাখতে পারবে না। প্রতিদিনি তিনি শক্তিশালী হচ্ছেন। এদেশের প্রতিটি মানুষ আরো শক্তিশালী হচ্ছে। এই দেশের মানুষের শক্তির জোরেই তিনি মুক্তি পাবেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পরে এই আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করেছে। আজকে দেশের যেমন অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। ঠিক সে সময়ে ওই সরকার একটা রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিল। এই বাহিনী দিয়ে হাজার হাজার তরুণ নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। ঠিক এমনিভাবে আজও সারা দেশের বিএনপি, ছাত্রদল যুবদলের নেতাকর্মীদের উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাদের পায়ে গুলি করে, হত্যা করে। কিন্তু এতকিছুর পরও একটা মানুষও এই দল ছেড়ে অন্য কোথাও যায়নি। একজনও বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ছাড়া অন্য কোনো স্বপ্ন দেখে না। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। লড়াই করছি। আমরা কোন দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সংগ্রাম করছি না। আমরা কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সংগ্রাম করছি না। আজকে আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম সেই গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা সংগ্রাম করছি আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য সত্যিকার একটা আবাসভূমি তৈরি করতে চাই। আমরা এই দেশের মানুষকে বাঁচাতে চাই। এই দেশের মানুষকে কাজ দিতে চাই। এই দেশের মা-বোনদের নিরাপত্তা দিতে চাই। সে জন্যই আমারা সংগ্রাম করছি। আজ এই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার দেশটাকে জুয়ার আসর বানিয়ে দিয়েছে। ক্যাসিনো বানিয়ে দিয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। আমি সেই দিকে যেতে চাই না। আমি বলতে চাই আজকে এই ক্যাসিনোর চাইতেও বড় অপরাধ করেছেন আপনারা। আপনারা এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। ভোট ডাকাতি করেছেন। সব লুটে নিয়েছেন। আমার সংবিধানে যে অধিকার দেয়া হয়েছে সে অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে এই সরকার। তারা বলেছিল দশ টাকায় মানুষকে চাল খাওয়াবে। বিনামূল্যে সার দিবে। সেই সারের দাম আজ চল্লিশ টাকার নিচে নাই। অথচ কৃষক ধানের দাম পায় না। শ্রমিক তার মজুরি পায় না। সব টাকা পাচার করে দিয়েছে। এই ক্যাসিনো বলেন, আর মেগা প্রজেক্ট বলেন এগুলো লুটে নিয়ে যাচ্ছে কারা? যারা এই অবৈধ টাকা নিয়ে গ্রেপ্তার হচ্ছে তাদের কারা মদদ দেয়? যে কয়জন এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে তারা সবাই যুবলীগের নেতা। তারা কি একা একাই এই কাজ করে যাচ্ছে? এই সরকারের লোকেরা বলেছেন এই ক্যাসিনো নাকি বিএনপি সরকারের আমলে উৎপত্তি। তাই আমি তাদের বলব আপনারা এই বারো বছর কি আঙুল চুষলেন। এতদিন তারা অপনাদের টাকা দিয়েছে আর আপনারা বিদেশে পার করেছেন। আর এখন চুনোপুঁটি ধরে এখন গায়ের গন্ধ নিবারণ করার চেষ্টা করছে। একবার যখন জনগণের কাছ থেকে আস্থা চলে যায় আর সেই আস্থা ফিরে আসে না। আপনারা সব সময় জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
পুলিশের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, এখন কোনো ভোট হয় না। কার ভোট কে দিচ্ছে এটার কোনো হদিস নেই। এখন ভোট দেয় পুলিশ ভাইয়েরা। পুলিশ ভাইদের বলি আপনারা কেন এই দায়িত্বটা নিচ্ছেন? এটা আপনাদের দায়িত্ব নয়। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সঙ্গে থাকা। তাই বলি, জনগণের প্রতিপক্ষ না হয়ে জনগণের পক্ষে আসুন। আর সরকারকে বলি অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। দেশে নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়ক এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহ শহীদ সারোয়ার, মাহবুবুর রহামান লিটন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, জামালপুরের সাবেক মেয়র ওয়ারেস আলী মামুন, খন্দকার নুরজাহান ইয়াসমীন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।