কেউ লিখছেন- ‘এক বছর টিভি দেখবো না।’ কেউ বলছেন ‘মাত্র তো ৩৬৫ দিন, আবার উৎসব হবে টাইগার ক্রিকেটে।’ আবার কেউ বলছেন- সাকিব ফিরলেই জাগবে আমাদের ক্রিকেট। তুলে রাখলাম ভালোবাসা।’ হ্যাঁ, সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় উন্মত্ত দেশের ক্রিকেটভক্তরা। কেউ আইসিসিকে দুষছেন কেউবা বিসিবিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন শুধু সাকিব আর সাকিব। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ভক্তদের এখন শুধুই অপেক্ষা। কবে ফিরবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের শিল্পী! জুয়াড়ির প্রস্তাবে রাজি হননি। কিন্তু থেকেছেন নীরব। নিয়ম অনুসারে জানাননি ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি), তাদের এন্টি করাপশন ইউনিট (আকসু) কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)।
তাই তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছর নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। শর্তও দিয়েছে, একবছর পরই ফিরতে পারবেন মাঠে। তবে এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
তার ফেরার সেই দিনটি ২০২০-এর ২৯শে অক্টোবর। ঠিক তার ১১ দিন আগে শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাহলে কি সাকিবকে ছাড়াই খেলতে হবে বিশ্বকাপে। সেখানে পড়বে না তার ব্যাট-বলের রং তুলির আচড়? বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান সাকিব ভক্তদের জন্য শুনিয়েছেন আশার বানী। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সাকিবের জন্য আমাদের বিশ্বকাপের দরজা খোলা থাকবে। তার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে, সুযোগ থাকলে অবশ্যই ও দলে থাকবে। ওর জন্য অপেক্ষাতো থাকবেই। এখন ভালোয় ভালোয় একটা বছর কেটে গেলেই হয়।’
অন্যদিকে বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনও জানিয়েছেন সাকিবকে নিয়েই রয়েছে তাদের বিশ্বকাপ ভাবনা। যদিও অনেক পথ বাকি বলে তিনি জানান। সুজন বলেন, ‘সাকিব বাংলাদেশে কয়টা আছে! কত বছরে আরেকটা সাকিব পাওয়া যাবে তা কেউ বলতেই পারবে না। আমরা জানি ২০২০-এর ১৮ই অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হবে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের খেলা ১৯ তারিখ থেকে। তার ঠিক ১০ দিন পর সাকিবের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কথা। আমাদের প্রথম রাউন্ডে (বাছাই) যদি নাও হয় দ্বিতীয় রাউন্ডে (মূল পর্ব) সুযোগ থাকতে পারে। তবে এগুলো অনেক দূরের বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি সাকিব দারুণভাবে ফিরে আসবে। অবশ্য আমাদের সহযোগিতার দরজা সব সময় তার জন্য খোলা থাকবে।’ আকরাম খান বলেন, ‘তাকে সুযোগ সুবিধা কী দেয়া যাবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বোর্ডে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সাকিব যেন মাঠে ফিরে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করার।’ তবে সাকিবের দলে থাকা বড় সমস্যা হবে। কারণ বিশ্বকাপের জন্য দল আগেই ঘোষণা করতে হবে। তবে সাকিব বলে কথা। নিষেধাজ্ঞা উঠলে তাকে নেয়ার সুযোগটা হয়তো হাতছাড়া করবে না বিসিবি।
আপিল করতে পারবে না বিসিবিও: সাকিব ভক্তরা আশায় আছেন হয়তো আপিল করলে কমতে পারে সাকিবের শাস্তির মেয়াদ। তাহলে অন্তত দেশের হয়ে আরো একটি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন তিনি। কিন্তু আপিল করবেন কে? আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই জানিয়ে দিয়েছে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই সাকিব শাস্তি মেনে নিয়েছে। দোষও স্বীকার করেছে। সাকিব নিজেও সংবাদ সম্মেলনে দায় স্বীকার করেছেন। তাই আইসিসির নিয়ম অনুসারে তার আপিল করার কোনো রকম সুযোগ নেই। তাহলে শেষ আশ্রয় বিসিবি কি পারবে আপিল করতে! নিজামুদ্দিন ও আকরাম খান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ‘না’। সিইও বলেন, ‘না, সাকিবতো নয়ই। আমাদেরও আপিল করার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। কারণ সাকিব আইসিসির শাস্তি মেনে নিয়েছে নিজে থেকেই। সে কারণে আমাদেরও সুযোগ নেই।’
বিসিবির চুক্তি থেকে বাদ সাকিব: নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়ছেন সাকিব আল হাসান। তবে বিষয়টি আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আকরাম খান। অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন বলেন, ‘এটা অবশ্যই বাতিল হওয়ার কথা। যে নিয়ম আছে, সেই অনুযায়ী এটা ২৯ অক্টোবর থেকেই বাতিল হওয়ার কথা। তবে বোর্ড এখনো এ বিষয়ে যেহেতু কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি, তাই এটা এখনই বাতিল হয়ে গেছে- এমনটা আমি বলতে পারি না।’
সাকিব ছাড়া টাইগারদের ক্রিকেট: সাজার সব শর্ত মেনে চললে ২০২০ সালের ২৯শে অক্টোবর মাঠে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব হারানো সাকিব। এ সময়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৯টিসহ মোট ১৩টি টেস্ট খেলতে পারবেন না তিনি। এছাড়াও ২০টি টি-টোয়েন্টি, এশিয়া কাপ বাদেও সাকিবকে ছাড়া তিনটি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা শুরু ভারত সফরের মধ্য দিয়ে। গতকালই ভারতের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গেছে বাংলাদেশ দল। সফরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজে সাকিবের সার্ভিস পাবেন না কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। সামনের বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুইটি টেস্ট ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে টাইগাররা। আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি হতে যাচ্ছে ১৮ই অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে আগামী বছরের ২৯শে অক্টোবর। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝপথে দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছে সাকিবের। সেই আশায়ই এখন গোটা বাংলাদেশ।
কী করবেন সাকিব!: সব জল্পনা কল্পনা ছাপিয়ে এখন প্রশ্ন কী করবেন সাকিব আল হাসান? জানা গেছে দ্রুতই তিনি স্ত্রী ও কন্যার জন্য যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই হয়তো সময় দিবেন পরিবারকে। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘সাকিব তার শেষ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন শক্তভাবে ফিরে আসার কথা। আমরা ওকে যতটা চিনি সে মানসিকভাবে শক্ত মানুষ। আমার বিশ্বাস সে ফিরে আসার জন্য সব কিছু করবে। নিজেই অনুশীলন করবে, ফিটনেস নিয়ে কাজ করবে। বিসিবি যদি সুযোগ না দেয় সে কোচ, ট্রেনার নিয়োগ করেই কাজ করবে। আমরা যতটা জানি এর বাইরে হয়তো সামাজিক ও আইসিসির বিভিন্ন প্রোগ্রামেও অংশ নিবে।’