ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল। যার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের (এসিইউ) কাছে গোপন করে নিষেধাজ্ঞা পেলেন সাকিব আল হাসান। আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিবের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং ধরেই সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আকসু। ভারতীয় জুয়াড়ির সঙ্গে কীভাবে পরিচিত হয়েছিলেন সাকিব, কীভাবেই বা তার নাম্বার পেলো ওই জুয়াড়ি। তার সঙ্গে কী আলাপ করেছিলেন সাকিব? এসব ব্যাপার জানতে দুই দফা সাকিবের সাক্ষাৎকার নেয় এসিইউ। প্রথম সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এ বছরের ২৩শে জানুয়ারি। দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার চলতি বছরের ২৭শে এপ্রিল। সাক্ষাৎকারে সাকিবের কাছ থেকে আইসিসি যা জানতে পেরেছে তা হলো-
২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) চলাকালে, সাকিবের পরিচিত এক ব্যক্তি তার টেলিফোন নম্বর দীপক আগারওয়ালকে দিয়েছেন।
আগারওয়াল ওই ব্যক্তিকে আগে থেকেই বিপিএল-এর খেলোয়াড়দের মোবাইল নম্বর দেয়ার জন্য বলে রেখেছিলেন। আগারওয়ালকে ফোন নম্বরটা দিয়েছিল সেটি জানতেন সাকিব।
২০১৭ সালের নভেম্বরে আগারওয়ালের অনুরোধে সাকিব হোয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে কিছু বার্তা আদান-প্রদান করেন। তখন আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট শুরু হয়। এতে সাকিবও খেলেছিলেন। সিরিজ চলাকালে আগারওয়াল ও সাকিবের মধ্যে বেশ কয়েকবার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা আদান-প্রদান হয়। ১৯শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত খেলায় ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়ায় সাকিবকে হোয়াটসঅ্যাপে অভিনন্দন জানান আগারওয়াল। এরপর আগারওয়াল তাকে আরেকটি বার্তা পাঠান, ‘আমরা কি এবারই কাজ করবো, নাকি আইপিএলের জন্য অপেক্ষা করবো?’।
এখানে ‘কাজ’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, সাকিব আগারওয়ালকে ভেতরের খবর দেবেন। সাকিব এই যোগাযোগের বিষয়টি এসিইউ অথবা অন্য কোনো দুর্নীতি-বিরোধী কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
২০১৮ সালের ২৩শে জানুয়ারি, আগারওয়ালের কাছ থেকে আরেকটি বার্তা পান সাকিব। ওই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায়, আগারওয়াল তার কাছে আবার ভেতরকার তথ্য চেয়ে যোগাযোগ করে। বার্তাটি ছিল এরকম, ‘ভাই, এই সিরিজে কিছু হবে?’ (ব্রো, অ্যানিথিং ইন দিজ সিরিজ?)। সাকিব নিশ্চিত করে বলেছেন যে, ওই বার্তার মাধ্যমে তখন চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজের বিষয়ে ভেতরকার তথ্য চাচ্ছিলেন আগারওয়াল। কিন্তু এটিও তিনি এসিইউ বা অন্য কোনো দুর্নীতি-বিরোধী সংস্থাকে অবহিত করেননি।
২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল, আইপিএল-এ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণ করেন সাকিব। ওই দিনই সাকিব হোয়াটসঅ্যাপে আগারওয়ালের কাছ থেকে বার্তা পান। ওই ম্যাচে খেলবেন কি না, সে ব্যাপারে সাকিবের কাছ থেকে তথ্য চাচ্ছিলেন আগারওয়াল। আবারো ভেতরকার তথ্য চাচ্ছিলেন তিনি।
আগারওয়াল এই আলাপচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বিটকয়েন ও ডলার অ্যাকাউন্টের প্রসঙ্গ তুলেন। সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে চান। এই আলাপচারিতার সময়ই, সাকিব আগারওয়ালকে বলেন যে, তিনি ‘আগে’ তার সঙ্গে দেখা করতে চান।
২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিলের ওই হোয়াটসঅ্যাপ আলাপচারিতায় অনেকগুলো বার্তা মুছে ফেলেন সাকিব। সাকিব নিশ্চিত করে বলেছেন যে, মুছে ফেলা ওই বার্তাগুলো ছিল মূলত ভেতরকার তথ্য চেয়ে আগারওয়ালের অনুরোধ।
সাকিব আইসিসিকে বলেছেন, আগারওয়ালের বিষয়ে তার মধ্যে উদ্বেগ ছিল। তার মনে হয়েছিল, এই ব্যক্তি ‘চতুর’। হোয়াটসঅ্যাপ আলাপচারিতার পর তার মনে হয়েছিল যে, আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি ছিলেন।
২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল আগারওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ বা তথ্য চেয়ে তিনি যেসব অনুরোধ করেছেন, সেই ব্যাপারে সাকিব এসিইউ বা অন্য কোনো দুর্নীতি-বিরোধী সংস্থাকে কিছুই জানাননি।