প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগমন নাজমুল হোসেন শান্তর। কিন্তু ধীরে ধীরে যেন হয়ে পড়ছিলেন এক গোলকধাঁধা! অনুশীলনে তার স্কিল দেখে মুগ্ধ হন যেকোনো কোচ। কিন্তু মাঠের খেলায় আর মেলে না সেই মুন্সিয়ানা। ৫০টি টি-টোয়েন্টি খেলে করেছিলেন কেবল একটা ফিফটি। এই সংস্করণে তিনি খেলতে পারেন কি-না এই বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিল তার। তবে সেই শান্তর ব্যাট থেকেই এলো এবারের বিপিএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি। পরে তিনি জানিয়েছেন তার অমন তেতে ওঠার রহস্য। এবারের বিপিএলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থেকে আট ম্যাচ খেলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
সাকুল্যে সংগ্রহ ১১৫ রান। আর শনিবার এক ম্যাচেই এলো ১১৫* রান। ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে হাঁকান সাতটি ছক্কা। এতে ঢাকার দেয়া ২০৬ রানের টার্গেট হেসে খেলে পার করে পয়েন্ট তাালিকার শীর্ষে পৌঁছে শান্তর দল খুলনা টাইগার্স। বিপিএলের ইতিহাসে ২০০ রান তাড়া করে জয়ের প্রথম নজির এটি। আজ বঙ্গবন্ধু বিপিএল-এর প্রথম কোয়ালিফায়ারে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে মাঠে নামবে খুলনা। বিজয়ী দল সরাসরি পৌঁছে যাবে ফাইনালে। তবে বিজীত দলও পাবে আরেকটি সুযোগ। এলিমিনেটর ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলার সুযোগ পাবে তারা।
এই সেঞ্চুরির আগে ৫০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে শান্তর সংগ্রহ ছিল ৭১৪ রান। গড় মাত্র ১৬.৬০। স্ট্রাইকরেট ছিল সাধারণ মানের ১১৪.৪২। আগে খেলা ৪৬ ইনিংস মিলিয়েই মারতে পেরেছিলেন মাত্র ১৪ ছক্কা। শনিবার হার না মানা সেঞ্চুরিতে ২০১.৭৫ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেন শান্ত। ম্যাচ শেষে শান্ত স্বীকার করলেন, একটা পর্যায়ে নিজের উপর থেকেই বিশ্বাস উবে গিয়েছিল তার। সেই বিশ্বাস যিনি ফিরিয়েছেন, সেই খালেদ মাহমুদ সুজনকে তিনি দিলেন কৃতিত্ব। শান্ত বলেন, ‘সত্যি বলতে খুব হতাশ ছিলাম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এই একটা ফরম্যাটে আমি হতাশ হয়ে যাই। লুকানোর কিছু নেই। শেষ দুই মাস আমার ওপরে ভরসা রেখেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন স্যার ও কুমিল্লার কোচ সোহেল স্যার। সবসময় ওনারা আমাকে বলেছেন, ‘তুই কতো ভালো খেলোয়াড় আমরা দেখেছি। আমাদের সেই বিশ্বাসটা আছে। তারা দুজন আমাকে যে সমর্থন করেছেন এবং এখনও যে সমর্থন করে যাচ্ছেন, সেটা আমার ব্যাটিংয়ে কাজে লেগেছে। আমারও ভেতর থেকে এসেছে যে আমি পারি। প্রথম চার ম্যাচে আমি রান করিনি। তারপরও আমি হতাশ হইনি যে আমি পারবো না বা অন্য কিছু। ওই দুজন আমাকে খুব সাহায্য করেছেন।’ এবার বিপিএলে প্রথম চার ম্যাচে শান্ত করেন মাত্র ৫ রান। তবু তাকে আশা জুগিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুজন। শান্ত বলেন, ‘এবার প্রথম চার ম্যাচে কোনো রানই করিনি। তারপরও খুব মন খারাপ করতে হয়নি। কারণ ওই দুজন খুব সাহায্য করেছেন। চার ম্যাচ খারাপ করার পর সুজন স্যার এসে বললেন, “তুই এই দলের মূল ক্রিকেটার। তুই অবশ্যই পারবি।” এই ধরনের কথা আসলে অনেক অনুপ্রাণিত করে। এজন্যই হয়তো এমন ইনিংসটি খেলতে পেরেছি।’