বাংলাদেশের জয়টা ছিল সময়ের ব্যাপার। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ইয়র্কারে চার্লটন শুমার স্টাম্প উপড়ে গেল। তখন কাভারে দাঁড়িয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা। সতীর্থরা এগিয়ে এলেন, জড়িয়ে ধরলেন তাদের প্রিয় বড় ভাই, প্রিয় নেতাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যিনি এতদিন কাঁধে তুলে এগিয়ে নিয়েছেন; এবার তাকে কাঁধে তুলে নিলেন তামিম-মাহমুদুল্লাহরা। তামিমের কাঁধে চড়ে গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন মাশরাফি। এরপর মাশরাফিকে বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরে কাঁধ থেকে নামানো হয়। অধিনায়ককে বাইরে রেখে ড্রেসিংরুমে চলে যায় দল।
সেখানে নিজেদের জার্সি পাল্টে সব খেলোয়াড় গায়ে চাপালেন বিশেষ জার্সি। যার সামনে লেখা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’, পেছনে মাশরাফির নাম ও নম্বর। মাশরাফির ২ নম্বর জার্সিটি ট্রেডমার্ক হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেটা বোঝাতেই এক মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবাই হয়ে গেলেন ‘মাশরাফি’। সতীর্থদের এমন আয়োজনে চমকে যান মাশরাফিও। তিনি বলেন, ‘এটা অনেক বড় সম্মানের। আমি জানতাম না ওরা এরকম চমক রেখেছে আমার জন্য। তবে মাঠেই সম্ভবত বড় উপহারটা পেয়েছি (দলের জয়)। ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। ছেলেদের ধন্যবাদ। সবাই দারুণ ছিল।’
লিটনকে নিয়ে যা বললেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’
২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ওয়ানডে অভিষেক লিটন কুমার দাসের। অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচে খেললেন ১৭৬ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। ম্যাচ শেষে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন মাশরাফি। প্রশংসায় ভাসালেন টাইগার ওপেনারকে। মাশরাফি বলেন, ‘আমার দু’জন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দেখতে সব সময় ভালো লাগে একজন বিরাট কোহলি আরেকজন হচ্ছে লিটন। সব সময় বলি, ভালো প্লেয়ার অনেক আছে। কিন্তু সে যতক্ষণ উইকেটে থাকে দেখতে ভালো লাগে, আমি লিটনকে এটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। আমি সব সময় বিশ্বাস করি লিটন শুধু উইকেটে থেকে খেলে সেটা না, লিটন মোমেন্টাম বদলে দিতে পারে। উইকেটে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে, বড় ইনিংস খেলতে পারে। সবই পারে। আমার বিশ্বাস ও এটা বুঝতে পেরেছে। চার-পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় ওর মধ্যে পরিপক্কতাও এসেছে। কয়েকদিন আগেও বলছিলাম এটা ওর পিক টাইম রান করার। আমার বিশ্বাস যে এখন ও রান করবে। ভারতের সঙ্গে যে সেঞ্চুরিটা করেছিল এশিয়া কাপে। আমি মনে করি ওটা তার স্বাভাবিক খেলা। আমি এটা প্রায়ই বলি ওকে।’
সাকিবকে মিস করেছেন মাশরাফি
প্রায় দেড় যুগ একসঙ্গে খেলেছেন দু’জন। নেতৃত্ব ছাড়ার ম্যাচে মাশরাফি পেলেন না সাকিব আল হাসানকে। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সাকিব আল হাসানকে একবছরের নিষেধাজ্ঞা (আরো এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে আইসিসি। আরো ৮ মাস ক্রিকেটের কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না সাকিব। এমনকি স্টেডিয়ামে আসার ব্যাপারেও রয়েছে বিধিনিষেধ। সিলেটে মাশরাফি বলেন ‘এটা অনেক বড় সম্মানের। ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে। তারা দলের জন্য সব উজাড় করে দিয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে সাকিবকে। সে যদি এখানে থাকতো, তাহলে বিষয়টা অন্যরকম হতো। সবাইকে ধন্যবাদ।’
অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচের আগের দিন রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাকিব। সেখানে মাশরাফিকে ‘সত্যিকারের নেতা’ আখ্যায়িত করে ‘প্রিয় ভাই’ হিসেবে তাকে সব সময় পাশে চেয়েছেন সাকিব।