সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম হয়নি তার। বরং অভাব-অভিযোগের মধ্য দিয়েই কেটেছে ছোটবেলা। বন্ধুদের টিপ্পনীও শুনতে হয়েছে। একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত সাধারণ একটা মেয়ে। আর আজ তিনি ভারতের সবচাইতে জনপ্রিয় গায়িকা। তিনি নেহা কক্কর। উত্তরপ্রদেশের ঋষিকেশে নেহার জন্ম ১৯৮৮ সালে ৬ই জুন । প্লেব্যাক গায়ক সনু কক্করের ছোট বোন তিনি।
তাঁদের একটা ভাইও রয়েছে, নাম টনি কক্কর। টনিও গায়ক। তাদের পরিবারে সংগীত চর্চার একটা রেওয়াজ ছিল। সে কারণে ছোট থেকে তিন ভাইবোনের মধ্যেও সংগীতের প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে। সংসারে প্রচুর অভাব-অনটন ছিল তাদের। ঋষিকেশে একটা এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকতেন তারা। বাবা-মা আর তিন ভাইবোন, ওই ছোট ঘরের মধ্যেই থাকতেন। আবার ওই ঘরটাই ছিল তাদের রান্নাঘরও। ঘরেরই একটা কোণে একটা টেবিল রেখে তার উপর রান্না করতেন নেহার মা।
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে ওই ভাড়া বাড়ির ছবিও শেয়ার করেছেন নেহা। নেহার বাবা ছিলেন সিঙারা বিক্রেতা। তার ভাই সনু কক্কর যে কলেজে পড়তেন, তার গেটের বাইরেই সিঙারা নিয়ে বসতেন তাদের বাবা। এ নিয়ে বন্ধুবান্ধবেরা হাসাহাসিও করতেন। টিপন্নীও কাটতেন। শুধু সিঙারা বিক্রি করে এত বড় সংসার সামলানো একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ছোট হলেও বাবার সমস্যাটা বেশ ভালোই বুঝতেন তিন ভাইবোন। তাই যে বয়সে অন্যান্য বাচ্চারা বাবা-মার ছত্রছায়ায় বয় হয়, খেলনা কিনে এনে দেন বাবা-মায়েরা, সেই বয়স থেকেই উপার্জন করতে শুরু করেন তারা। সনু, নেহা আর টনি- তিন ভাইবোনই উৎসবের সময় মন্দিরে ভজন গাইতেন। পরিবর্তে তারা ৫০ টাকা করে পেতেন। বাড়ি ফিরে সেই টাকা তারা মায়ের হাতে তুলে দিতেন।
মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে গান গাইতে শুরু করেন নেহা। তার গায়িকা হবার জার্নি শুরু হয়েছিল একাদশ শ্রেণি থেকে। তখন ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ২-এর প্রতিযোগী বাছাই চলছিল। খবর পেয়ে সেটে চলে যান নেহা। তার গানে মুগ্ধ হয়ে যান বিচারকেরা। সিজন ২-এর প্রতিযোগী হিসাবে সেরা দশে জায়গা করে নেন। ২০০৮ সালে ভাই টনির সঙ্গে মুম্বই রওনা দেন নেহা। ‘নহা দ্য রকস্টার’ নামে তার গানের অ্যালবাম মুক্তি পায়। ২০১৩ সালে প্লেব্যাক ডেবিউ করেন। ২০১৪ সালে তার গান ‘সানি সানি’ ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা হিট গান দিয়ে গেছেন বলিউড ছবিতে। যে ঋষিকেশে ছোট এক কামরার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন, সেখানেই নেহা বিলাসবহুল বাংলো কিনে ফেলেছেন নেহা। যে ইন্ডিয়ান আইডল থেকে তার উত্থান, এখন সেই অনুষ্ঠানের বিচারকের আসনে বসেছেন নেহা।