গ্রিস সীমান্তে ভয়াবহ এক মানব ট্রাজেডি ঘটছে। কয়েক হাজার অভিবাসী তুরস্ক-গ্রিস সীমান্ত দিয়ে গ্রিসে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্রিক পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে কঠোর অবস্থান। অভিবাসীদের অনেকে বলেছেন, পুলিশ তাদেরকে প্রহার করেছে। তাদের সঙ্গে থাকা অর্থ কেড়ে নিয়েছে। পায়ের জুতা কেড়ে নিয়েছে। এরপর তুরস্কের দিকে একটি ট্রাকে তাদেরকে দলা পাকিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। একজন অভিবাসী তার শার্ট খুলে দেখিয়েছেন পিঠে প্রহারের দাগ কিভাবে স্পষ্ট হয়ে আছে।
ওই অঞ্চল সফর করেছেন লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইলের সাংবাদিক ইয়ান বিরেল। তিনি ওই মানব ট্রাজেডি প্রত্যক্ষ করে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তার কাছে নির্যাতিত এসব অভিবাসী বলেছেন, তারা অন্তঃসত্ত্বা একজন নারীকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। আবদুল রাজ্জাক আল মুহাদ নামে এক অভিবাসী বলেছেন, তার পরিবার একটি বনের ভিতর ৫ দিন আত্মগোপন করে কাটিয়েছেন। তারপর গ্রিক পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। তাদের সঙ্গে থাকা সব কিছু কেড়ে নিয়েছে তারা।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়ার ফলে সেখান থেকে পালিয়ে কয়েক বছর আগে দক্ষিণ তুরস্কে একজন শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন মুহাম্মদ। গত সপ্তাহে তিনি শুনতে পান গ্রিস সীমান্ত খুলে দিয়েছে। মুহাম্মদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে যাওয়া। ফলে এমন খবর পেয়ে তিনিও পা বাড়ান অন্ধকার এক ভয়াবহ জগতে। তিনি তুরস্ক-গ্রিস সীমান্ত পাড়ি দেন। গ্রিসের ভিতর দিয়ে কয়েক ঘন্টা হাঁটতে থাকেন। কিন্তু তাকে স্থানীয় লোকজন চিনতে পারে। তারা পুলিশে খবর দেয়। মুহাম্মদ বলেন, তারা আমাদের কাছে থাকা সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাদেরকে প্রহার করেছে। এতে তাদের একজনের নাক ভেঙে গেছে। অন্য একজনকে রাইফেলের বাট দিয়ে প্রহার করা হয়েছে। এরপর ফেরত পাঠানো হয়েছে তুরস্কে। এ সময় তিনি শার্ট খুলে দেখান গায়ে প্রহারের চিহ্ন। তিনি বলেন, পুলিশ তার স্ত্রীকে পর্যন্ত মেরেছে। তিনি ডকুমেন্ট ফেরত চেয়েছিলেন। কারণ, তার ভিতর তাদের বিয়ের সনদ রয়েছে।
ইয়ান বিরেল লিখেছেন, এই স্থানটি ইউরোপের সবচেয়ে গন্ডগোলপূর্ণ এলাকা। এর মূলে রয়েছে সিরিয়া যুদ্ধের সঙ্কট। এখনও সেই যুদ্ধ চলছে ৯ বছর পরে। সেখানে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন আমি ছিলাম রাজধানী দামেস্কে। আমি ছিলাম একজন তরুণ। সেখানে রক্তপাত, বিশৃংখল অবস্থার মধ্যে দেখেছি গণতন্ত্র কিভাবে মরে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৭০ লাখ। কিছু বিশ্লেষক বলেন, সিরিয়া যুদ্ধ এখন স্থান বদল করে পৌঁছে গেছে ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান অভিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ইউরোপকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য কিছু বিশ্লেষক তাকে অভিযুক্ত করেছেন। তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সিরিয়ার যুদ্ধকে গ্রিস সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। একটি বিষয় সুনিশ্চিত। তা হলো, এই দু’টি দেশের মধ্যবর্তী সীমান্তে মৃত্যু এবং নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার সীমান্তে আরো বাজে দৃশ্য দেখা গেছে। ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। এ সময় অভিবাসীরা ‘সীমান্ত গেট খুলে দাও’ স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে সীমান্তের বেড়া ধরে ধাক্কা দিতে থাকেন। তাদের অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, গ্রিক পুলিশ তাদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় ও অভিবাসীদের মধ্যে সৃষ্ট তিক্ততা দূর করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা।