‘করোনা থাকবে আরও দুই-তিন বছর’ বক্তব্য নিয়ে স্বাস্থ্যের ডিজির দুঃখ প্রকাশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের একটি বক্তব্যকে ঘিরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে বৃহস্পতিবার (১৮ ‍জুন) তিনি ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন।

শুক্রবার (১৯ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এতে বলা হয়, মহাপরিচালকের বক্তব্যের স্ক্রিপ্টটি দ্রুততার সঙ্গে তৈরি করায় তিনি সেটি ভালোভাবে দেখে দেওয়ার সুযোগ পাননি এবং স্ক্রিপ্ট পড়ে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন যে, ওই বক্তব্যে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। তাই প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি স্পষ্ট করেন। সেইসঙ্গে বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
মহাপরিচালকের বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল এবং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অপরপক্ষে করোনা ভাইরাসও অত্যন্ত ছোঁয়াচে। একারণে অসতর্ক চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে, কর্মহীনতা, আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে অপুষ্টি, রোগবালাই ও মৃত্যু ঘটতে পারে। সেই কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কিছুদিন পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে।
কিন্তু করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে অনেক লুকায়িত এবং মৃদু কেসও শনাক্ত হবে। সে ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি সারাবিশ্বে এক দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। একটি সফল টিকা আবিষ্কার এবং পর্যাপ্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সফল প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দেশজুড়ে করোনার অস্তিত্ব থাকবে। ফলে একটি এক বছরের বেশি এমনকি দুই বা তিন বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। যদিও আমরা মনে করি, সংক্রমণের মাত্রা অনেক হ্রাস পাবে।’
মহাপরিচালক তার বক্তব্যে সরকারের প্রস্তুতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন যে, এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্যক উপলব্ধি করেন। এই মুহূর্তে তিনি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ব্যক্তি। করোনা শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব উপজীব্যকে ঘিরে। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি ২০০০ চিকিৎসক ও ৫০০০ নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিক্যার টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার নির্দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতা তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে শুরু হয়েছে।
মহাপরিচালক এ ব্যাখ্যার মাধ্যমে সাংবাদিকসহ সবাইকে বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। স্ক্রিপ্টের জন্য যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য তিনি বিনীতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *