শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ অনিশ্চিত। তবুও গেল দু’দিন ধরে সাদা পোশাকেই অনুশীলন করছেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ। গতকাল তার ব্যাটিং অনুশীলনে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। লাল রংয়ের টি-শার্ট গায়ে ডমিঙ্গো নেটের পিছনে টেস্ট অধিনায়ককে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তার থেকে কিছু দূরে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ব্যস্ত মুশফিকুর রহীমের কিপিং অনুশীলনে। ট্রেনার নিকোলাস লি তামিম ইকবালের রানিং ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখছেন। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন কথা বলছেন মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। ফিজিও জুলিয়ান ক্যালিফ্যাতো মাঠ থেকে জিম ছুটে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটারদের খোঁজ খবর নিতে।
হ্যাঁ, টাইগারদের বিদেশি কোচরা কিছু দিন হলো বাংলাদেশে ফিরেছেন। সরকারের শর্ত অনুসারে কোয়ারেন্টিনেও ছিলেন। তবে তাদের ১৪ দিন বসিয়ে সময় নষ্ট করতে চায়নি বিসিবি। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমতি নিয়েই তাদের কোয়ারেন্টিন শিথিল করেছে তারা। সেই সুযোগে কোচরা ফুরফুরে মেজাজে আবারো সঙ্গী হয়েছেন টাইগার শিষ্যদের। এমন সময় মাঠে হাজির হয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও। কোচদের পেয়ে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুলও দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘এত দিন কোন কোচরা ছিল না। তারা আসায় এখন অনুশীলনে দারুণ প্রভাব পড়বে। আমরা সচেতন থেকেই অনুশীলন করছিলাম। তারা আসাতে সেটি আরো বেড়ে গেছে। চোট, বড় সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারছি। বলতে পারেন এখন অনুশীলনটা আরো ভালো হবে।’
সব শেষ গেল ফ্রেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ পর্যন্ত তারা ছিলেন বাংলাদেশে। এরপর করোনা মহামারি শুরু হতেই চলে যান নিজ নিজ দেশে। তবে শ্রীলঙ্কা সিরিজকে সামনে রেখে আবারো তারা দায়িত্ব নিতে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে। কোচদের পেয়ে প্রায় সব ক্রিকেটারকেই দেখা গেছে দারুণ প্রাণ চঞ্চলভাবে অনুশীলন করতে। এমন সময় মাঠে হাজির হয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনিও কথা বলেন কোচদের সঙ্গে। বাংলাদেশ সরকারের নিয়মানুযায়ী কেউ দেশের বাইরে থেকে এলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক। করোনা মহামারি মোকাবিলায় কঠোর সরকার। কিন্তু ক্রিকেটের কথা ভেবেই কিনা বিদেশি কোচদের কোয়ারেন্টিন শিথিল করা হয়েছে কারণ সামনেই শ্রীলঙ্কা সফর। কোচদের এখন ক্রিকেটারদের পাশে থাকতে হবে। তবে তারা যখন মাঠে তখন শ্রীলঙ্কা সফরের আকাশে কালো মেঘ । কোয়ারেন্টিন শর্ত জটিলতায় এই সফরই এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে মানাতে পারলেও শ্রীলঙ্কা বোর্ড ব্যর্থ। লঙ্কান বোর্ড তাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের কঠিন শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ওপর। যেমন ১৪ দিন কোয়ারেন্টিননে থাকতে হবে। কোনো অনুশীলন করা যাবে না, এমনকি দলের সঙ্গে থ্রোয়ারও নেয়া যাবে না। আর বিসিবির কড়া জবাব- এমন শর্ত মেনে টেস্ট খেলা যাবে না। তবে সফর হোক বা না হোক টাইগার কোচরা বেশ কিছুদিন সময় দিবেন দলকে আবারো মাঠে ফেরানোর জন্য প্রস্তুত করতে। গতকাল তাদের ব্যস্ততা ছিল ক্রিকেটারদের ফিটনেসের অবস্থা দেখার জন্যই। এসেই সামাজিক দূরত্ব মেনেই কনুইয়ে কনুই ঠেকিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। ক্রিকেটাররাও তাদের কাছে ছুটে গেছেন নানা বিষয়ে। কোচদের দেখা গেছে মন দিয়ে তা শুনতে।
লম্বা সময় ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন টাইগাররা। সেই ছাপ এখনো অনেকের শরীরে। যেমন দেখা গেল ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল রানিং করতে গিয়ে দ্রুত হাঁপিয়ে যাাচ্ছেন। কিছুক্ষণ রানিং করেই দুই পা ধরে বসে পড়ছেন মাঠে। নিঃশ্বাস নিচ্ছেন জোরে। ব্যাটিং অনুশীলনেও তেমন সাবলিল নয় । এছাড়াও টেস্ট অধিনায়ক নেটে সিরিয়াস। তবে তামিমের রানিং থেকে হয়তো সন্তুষ্ট হতে পারেননি ট্রেনার নিক লি। কোচদের এখন প্রধান কাজ ক্রিকেটারদের শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি ম্যাচ ফিটনেসও ফেরানো। যদি শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফর নাই হয় তাহলে হয়তো বিদেশি কোচদের বিশেষ কন্ডিশনিং ক্যাম্প করাতে হবে টাইগারদের খেলার জন্য প্রস্তুত করতে। বিসিবি সভাপতি মাঠে এসে কোচদের সঙ্গে কথা বলেছেন। হয়তো তিনি সেই নির্দেশটাও দিয়েছেন।