সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দুই মাস আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ডিএসইএক্স সূচকটি গতকাল ৮৭ পয়েন্ট বা প্রায় দেড় শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২১৭ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ২৫ মে এই সূচক ছয় হাজার ১৮৮ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
ডিএসইর মতো মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের পর থেকে একটানা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা, ডলারসংকটের মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক দুই ঘণ্টা করে লোড শেডিংয়ের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব কম্পানির দরপতন ঘটেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ক্রেতাসংকটে ডিএসইতে ২৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে চলে গেছে। পৌনে ৩০০ প্রতিষ্ঠান ক্রেতাসংকটে পড়ে বড় পতন হয়েছে সব কয়টি মূল্যসূচকের। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ আশায় লেনদেনের বেশির ভাগ সময় ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে।
হোঁচট খেল জ্বালানি খাত : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তালিকাভুক্ত ২৩টি কম্পানির মধ্যে বেশির ভাগের দর কমেছে দিনের সর্বোচ্চ সীমায়। জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার অঞ্চলভিত্তিক লোড শেডিংয়ের পরিকল্পনা করার পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই খাতের সব কম্পানি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশের কাছাকাছি দর কমেছে বেশির ভাগের। পাশাপাশি শতভাগ দরপতন হয় বীমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, চামড়া ও আনুষঙ্গিক, তথ্য-প্রযুক্তি, সিমেন্ট, টেলিকমিউনিকেশনস, কাগজ ও আনুষঙ্গিক, পাট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১২টির দাম বেড়েছে। আর দাম কমেছে ৩৫৮টির বা ৯৪ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির শেয়ারের দাম।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৭ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২১৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
গতকাল লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফরচুন শু, গ্রামীণফোন, অরিয়ন ইনফিউশন, কেডিএস অ্যাসোসিয়েটস, তিতাস গ্যাস, বিএটিবিসি, অরিয়ন ফার্মা ও এইচ আর টেক্সটাইল। এর মধ্যে বেশি লেনদেন হয়েছে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের শেয়ার। কম্পানিটির ৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন শুজ।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসই সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬১ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬০টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।