ভুল করা ও ভুলে যাওয়া এক প্রকার দুর্বলতা। আর আল্লাহ সব দুর্বলতার ঊর্ধ্বে। তাই আল্লাহ কোনো কিছু ভুলে যান না। তবে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহর সঙ্গে ‘নাসিয়া’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ ভুলে যাওয়া।
তাফসিরবিদরা বলেন, আল্লাহর সঙ্গে ‘নাসিয়া’ শব্দটি তার মূল অর্থে ব্যবহূত হয়নি। বরং বান্দার কাজের প্রতিবিধান হিসেবে তা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদেরকে বিস্মৃত হব, যেভাবে তারা তাদের এই দিনের সাক্ষােক ভুলেছিল এবং যেভাবে তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫১)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘শাস্তি আস্বাদন করো। কেননা আজকের এই সাক্ষাতের কথা তোমরা বিস্মৃত হয়েছিলে। আমিও তোমাদেরকে বিস্মৃত হয়েছি, তোমরা যা করতে সে জন্য তোমরা স্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১৪)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহকে বিস্মৃত হয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন; মুনাফিকরা তো পাপাচারী। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৭)
সুরা তাওবার উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে জারির তাবারি (রহ.) বলেন, ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে’—এর অর্থ হলো তারা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর নির্দেশ মান্য করেনি। আর ‘আল্লাহ তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন’—এর অর্থ হলো তিনি তাদেরকে ভালো কাজের সুযোগ, সুপথ ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এখানে ‘নাসিয়া’ শব্দটি পরিহারের অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। (তাফসিরে তাবারি : ১১/৫৪৯)
শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাসিয়া’-এর একটি অর্থ কোনো কিছু বিস্মৃত হওয়া। মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এই অর্থ গ্রহণ করা বৈধ নয়। দ্বিতীয় অর্থ হলো ছেড়ে দেওয়া বা পরিহার করা। আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘নাসিয়া’ শব্দটি এই অর্থেই ব্যবহূত হয়েছে। ‘আল্লাহ পরকালে অবিশ্বাসীদের বিস্মৃত হবেন’—এর অর্থ হলো তিনি তাদেরকে পাপমুক্ত করবেন না, তাদেরকে জাহান্নামে ছেড়ে দেবেন এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করবেন। (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন : ৩/৫৪-৫৬)
আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া