গ্রহ-নক্ষত্র আল্লাহর প্রবল শক্তির বহিঃপ্রকাশ

আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র সব কিছুর একমাত্র স্রষ্টা ও মালিক মহান আল্লাহ। তিনিই এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের ওপর সমাসীন হন।তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, যাতে ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বরিতগতিতে; সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি, সারা জাহানের রব আল্লাহ হলেন বরকতময়। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৪)

 

সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ তাঁর মাখলুকদের জন্য বিশাল আসমান বানিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি একে আলোকমালা (গ্রহ-নক্ষত্র) দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন। এবং আকাশের পরিপূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থায়ও তাদের নিয়োজিত করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দুই দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উহার বিধান ব্যক্ত করলেন এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। ’ (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ১২)

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি এই বিশাল আকাশের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, তিনি মূলত তারকারাজির মাধ্যমে বিশাল এই আসমানকে শয়তান থেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। তাঁদের এই ব্যাখ্যার পক্ষে অবশ্য আয়াত-ও আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি। ’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৫)

অর্থাৎ শয়তানদল যখন আসমানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন নক্ষত্রকে তাদের প্রতি উল্কারূপে নিক্ষেপ করা হয়।

শুধু তা-ই নয়, মহান আল্লাহর এই সৃষ্টিগুলোর পেছনে হাজারো রহস্য রয়েছে। তন্মধ্যে আরেকটি রহস্য হলো, মহান আল্লাহ এগুলোকে অন্ধকারে দিকনির্নয়ের মাধ্যম বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা সেগুলোর সাহায্যে জলে-স্থলে অন্ধকারে পথের দিশা লাভ করতে পারো। আমি আমার নিদর্শনগুলোকে জ্ঞানীদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৭)

অনেকে আবার মনে করে, মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে নক্ষত্রের যোগসূত্র রয়েছে। নক্ষত্রের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য বদল হয়, বৃষ্টিপাত হয়—ইসলামের দৃষ্টিতে এই কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কি জান, তোমাদের রব কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমি যখন আমার বান্দার ওপর অনুগ্রহ করি, তখনই তাদের একদল তা অস্বীকার করে এবং তারা বলে নক্ষত্র, নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের কাজ হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৫)

গ্রহ-নক্ষত্র মহান আল্লাহর সৃষ্টি মাত্র। এগুলোকে মানুষের ভাগ্যের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী ভাবার কোনো কারণ নেই। মহান আল্লাহ এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং এগুলো সুরক্ষার জন্য তিনি এগুলোতে সম্প্রসারণ গতিও দিয়ে দিয়েছেন। কারণ এসব গ্রহ-নক্ষত্রের রয়েছে মহাকর্ষ শক্তি। এই মহাকর্ষ শক্তির টানে এরা একে অপরের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে। যদি আসতে পারে তাহলে একে অপরের সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। করুণাময় আল্লাহ মহাকর্ষ শক্তির বিরুদ্ধে আরেকটি বিপরীত শক্তির সুন্দর ব্যবস্থা সক্রিয় করে রেখেছেন। যাতে সম্প্রসারণ গতি বলে। মহাবিশ্বের সুষম হারে অবিরত সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে গ্রহ-নক্ষত্র তথা গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে চলেছে। তাই এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় না। মহান আল্লাহ দয়া করে যদি মহাকর্ষ বলে বিপরীতে সম্প্রসারণ গতি না বানাতেন, তাহলে এই আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র কিছুই থাকত না। আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র যে মহান আল্লাহর বিশেষ আদেশ অনুসরণ করে চলে—এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত, দিন, সূর্য ও চাঁদকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই আদেশে; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সমপ্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২)

কিন্তু এগুলো তত দিন এই নিয়ম মেনে চলবে, যত দিন মহান আল্লাহ তাদের এভাবে চলতে নির্দেশ দেবেন। যখন মহান আল্লাহ আলোকময় এই নক্ষত্রগুলোকে আলোহীন হওয়ার নির্দেশ দেবেন, সেদিন তারা আলোহীন হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারকারাজি আলোহীন হবে। ’ (সুরা : মুরসালাত, আয়াত : ৮)

যখন মহান আল্লাহ গ্রহ-নক্ষত্র সম্প্রসারণ গতি তুলে নেবেন, তখন এরা একে অপরের কাছাকাছি চলে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। এবং আসমান জমিন যা কিছু আছে, সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন সূর্যকে গুটিয়ে নেওয়া হবে। আর তারকাগুলো যখন তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসে পড়বে। আর পর্বতগুলোকে যখন সঞ্চালিত করা হবে। ’ (সুরা : তাকভির, আয়াত : ১-৩)

অতএব, আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের সুশৃঙ্খল বিচরণ মহান আল্লাহর প্রবলশক্তি ও রহমতের নিদর্শন। এগুলো মহান আল্লাহর নির্দেশে শৃঙ্খলা বজায় না রাখলে আমাদের অস্তিত্বই থাকত না।

 

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *