দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের শতকরা ৯১ ভাগ দিনের অর্ধেক সময় মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন। এ ক্ষেত্রে নারীরা সবচেয়ে এগিয়ে। নারীদের ৬৩ শতাংশ মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে গ্রামীণফোন আয়োজিত এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ও টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়ুর্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন। এশিয়ার আটটি দেশের প্রায় আট হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়।
দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, দেশে শতকরা ৯১ ভাগ ব্যবহারকারী দিনের অন্তত অর্ধেক সময় এবং ২০ শতাংশ ব্যবহারকারী সব সময় ফোন ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন নারীরা। এ হার ৬৩ শতাংশ। এ ছাড়া সমীক্ষায় দেশের ৫৯ শতাংশ নারী এবং ৫০ শতাংশ পুরুষ মনে করেন, মোবাইল ফোনের কারণে তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, শতকরা ৭৩ ভাগ বাংলাদেশি জানিয়েছেন, আগামী এক থেকে দুই বছরে তাদের মুঠোফোন ব্যবহার বাড়বে। তবে ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি মুঠোফোন ডিভাইসের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। শতকরা ৭৪ শতাংশ বাংলাদেশি বিশ্বাস করেন, ডিজিটাল মাধ্যমের সহজলভ্যতা (এক্সেস) একটি পরিবেশবান্ধব জীবন যাপনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ও টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়নে সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ বলেন, এ সমীক্ষা আমাদের অন্যরকম ধারণা দিচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারির আগের সময়ের তুলনায় এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা ঘরে-বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, আমাদের প্রচেষ্টার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে মোবাইল প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, নগর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।
সমীক্ষা প্রকাশ পরবর্তী আলোচনায় ইউএনডিপির ডেপুটি রেসিডেন্ট প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা, গ্রামীণফোনের চীফ বিজনেস অফিসার ড. আসিফ নাইমুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আঙুলের ছোঁয়ায় জীবন অলওয়েজ অন্য : প্রায় সব উত্তরদাতাই বলেছেন যে, দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময়জুড়ে তারা ফোন তাদের সঙ্গেই রাখেন, যেখানে প্রতি পাঁচজনে জানিয়েছেন তিনি কখনই ফোন ছাড়া থাকেন না। তবে শতকরা প্রায় ৭১ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন, তারা প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভারসাম্য বজায় রেখে চলেন। দেশের শতকরা ৯১ ভাগ ব্যবহারকারী দিনের অন্তত অর্ধেক সময় তাদের ফোন ব্যবহার করেন, অন্যদিকে ২০ শতাংশ উত্তরদাতা সবসময় তাদের ফোন ব্যবহার করেন।
শতকরা ৭৩ ভাগ বাংলাদেশি জানিয়েছেন, আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসে তাদের মোবাইল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং বিগত দুই বছরে দেশে এ ডিজিটাল রূপান্তরের গতি কমে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
ডিজিটাল জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা : এ অঞ্চলের শতকরা ৮৫ ভাগ উত্তরদাতা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের বিষয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশি উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ এ বিষয়ে শঙ্কিত। এ উদ্বেগ অল্পবয়সী উত্তরদাতাদের মাঝে আরও বেশি স্পষ্ট যেখানে শতকরা ৬৮ ভাগ জেন জি’র উত্তরদাতা এবং শতকরা ৬৯ ভাগ মিলেনিয়াল উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ডিজিটাল পরিসরে আস্থার অভাব : পুরো অঞ্চলজুড়ে মোবাইল ডিভাইসের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে (বাংলাদেশি উত্তরদাতাদের হার ৯৭ শতাংশ)। বাংলাদেশে বেবি ব্লুমারদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জীবনের মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতির কথা স্বীকার করার হার সবচেয়ে বেশি (৭১ শতাংশ)। একই সঙ্গে তারা এই ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন (৮৯ শতাংশ)। পুরো অঞ্চলজুড়ে অন্যস্থানে জেন জি এবং মিলেনিয়াল উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং অনলাইন নিরাপত্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
টেকসই জীবনযাপনে মোবাইলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা : মানুষ আরও টেকসই জীবনযাপনের সহায়ক হিসেবে মোবাইল প্রযুক্তির সম্ভাবনার আশাবাদী। শতকরা ৭৪ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, ডিজিটাল অ্যাক্সেস একটি পরিবেশবান্ধব জীবন যাপনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শতকরা ৬৯ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতা মনে করেন, কাগজ, বর্জ্য এবং বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে এবং যোগাযোগকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুললে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে (৭৪ শতাংশ)।
ডিজিটাল বৈষম্য দূর করছে মোবাইল প্রযুক্তি : সমীক্ষায় মোবাইল ব্যবহারের বৃহত্তর সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন, মোবাইল কানেক্টিভিটি অন্তর্ভুক্তি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মোবাইল কানেক্টিভিটি সাধারণের জন্য শিক্ষা (৬৪ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবার (৫৫ শতাংশ) মতো প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি আরও সহজলভ্য করে। পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি নারী মনে করেন মোবাইল সংযোগ তাদের কর্মসংস্থান এবং উপার্জনের বিকল্পগুলো উন্নত করেছে। সেইসঙ্গে এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা অর্জনে সহায়তা করেছে।