পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি

টানা ২০ মাস ধরে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে খুব প্রশংসা কুড়ানোর চেষ্টা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নৈতিকভাবেও অধিষ্ঠিত হতে চেয়েছেন উঁচু স্থানে। তাঁর এই পরিকল্পনা পশ্চিমের বেশির ভাগ দেশে সমাদৃতও হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্য অংশে তেমনটা ঘটেনি। অনেক দেশ মনে করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরাশক্তির দ্বন্দ্ব। তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানতে অস্বীকৃতি জানানো কিংবা অনেকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে।

এখন গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েলকে বাইডেন প্রশাসনের দৃঢ় সমর্থন ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিশ্বব্যাপী জনমত পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাটায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

গত বৃহস্পতিবার ওভাল অফিস থেকে দেওয়া বক্তব্যে ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য মার্কিন সমর্থন এক ও অভিন্ন বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। গণতন্ত্রের সঙ্গে লড়াইকারী শত্রুদের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করতে এবং ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সহযোগিতায় নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও জানান তিনি।

গত বছর থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে, গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। দেশ হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বই স্বীকার করে না হামাস।

কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ ও স্থল আগ্রাসন চালানোর হুমকি এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন ও সহায়তা ভণ্ডামির পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল, আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্মিলিত শক্তি ‘গ্লোবাল সাউথ’ পশ্চিমকে রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে প্রভাব বিস্তারে একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক ঝুঁকি মূল্যায়ন সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ক্লিফোর্ড কুপচান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পাশ্চাত্যের সঙ্গে ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েন আরও বাড়াবে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান অবিচারের নিন্দা জানিয়েছেন। দেশটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যুদ্ধে উৎসাহ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। ব্রাজিল সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে। এতে স্পষ্টভাবে হামাসের হামলার নিন্দা করা হয়। কিন্তু তাতে ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে’– এই কথা উল্লেখ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাবে ভেটো দেয়।

গাজা নিয়ে আরব নেতারাও সরব। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গত শনিবার কায়রো শান্তি সম্মেলনে বক্তৃতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গাজায় হামলার জন্য ইসরায়েলের জবাবদিহির কথা বলেন বাদশাহ আবদুল্লাহ।

সিরিয়া ও লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করে মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইরানের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করেছেন। গাজা অবরোধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবরোধের সঙ্গে তুলনা করেছেন রুশ নেতা। চীনও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সম্প্রতি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য মধ্যস্থতা করেছে।

এদিকে, রাশিয়া ও চীন হামাসের নিন্দা করেনি। তারা বরং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের বর্বরতার সমালোচনা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমারা ভারত ও তুরস্কের মতো দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজার ক্ষেত্রেও এমনটাই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *