ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে। বিশেষত, বিবাহের সম্পর্কের মধ্যে স্ত্রীর অধিকারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে স্ত্রীর অধিকার শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মর্যাদা আর সম্মান রক্ষার্থে নয়, বরং পারিবারিক সম্পর্কের ভারসাম্য ও শান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
পারিবারিক সম্পর্কের ভারসাম্য ও শান্তির জন্য ইসলামে স্ত্রীর কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি স্ত্রীর রয়েছে কিছু মৌলিক অধিকার, যা তার স্বামীর কাছে পাওনা। এ অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হলে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সহানুভূতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা দাম্পত্য জীবনের সাফল্য ও শান্তি নিশ্চিত করে।
বিবাহ প্রস্তাব গ্রহণের অধিকারঃ
ইসলামে একজন স্ত্রীর প্রথম অধিকার হলো তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তিনি বিবাহের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন কিনা। অনেকেই মনে করেন, মেয়েদের জন্য বিবাহ প্রস্তাব গ্রহণ করাটা বাধ্যতামূলক, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। ইসলামে নারীর অধিকার সংরক্ষিত। তিনি যেকোনো সময় বিবাহ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ করার অধিকার রাখেন।
দেনমোহর গ্রহণের অধিকারঃ
ইসলামে স্ত্রীর অধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মহর বা দেনমোহর। এটি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা, সম্মান এবং নিয়ত প্রকাশের প্রতীক। মহর স্ত্রীকে সরাসরি দেয়া হয়। এটি স্বামী বা স্ত্রীর পরিবারকে নয়, স্ত্রীর নিজস্ব সম্পত্তি হয়। এটি সাধারণত মুল্য বা উপহার আকারে নির্ধারিত হয়। এটি মেয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয়।
ভদ্র ও সদয় আচরণের অধিকারঃ
একজন স্ত্রীর সঙ্গে সদয় ও ভদ্র আচরণ করার অধিকার রয়েছে। ইসলাম নারীকে শুধু আর্থিকভাবে নিরাপদ না, বরং ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করার জন্যও উৎসাহিত করেছে। স্বামী স্ত্রীর জন্য সহানুভূতি ও সদয় আচরণ প্রদর্শন করবে, যেমন স্ত্রীর সৌন্দর্যবর্ধনে সময় দেয়া, তাকে তার ব্যক্তিগত চেষ্টায় সহযোগিতা করা।
গোপনীয়তার অধিকারঃ
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোপনীয়তা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম একে অপরের গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখতে উৎসাহিত করে এবং এটিকে প্রকাশ্যে না আনার জন্য সতর্ক করে। বিশেষ করে, স্বামী বা স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কখনোই তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়, কারণ এটি তাদের সম্পর্কের মর্যাদাহানি ঘটাতে পারে।
শান্তিপূর্ণ গৃহপরিবেশের অধিকারঃ
একজন স্ত্রীর অধিকার হলো শান্তিপূর্ণ একটি গৃহপরিবেশ পাওয়া, যেখানে তার মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূর্ণ হবে। তার ছোট খাটো ভুলগুলো ক্ষমা করা হবে। স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর সাথে সুন্দর এবং সহানুভূতির সাথে আচরণ করতে হবে। গৃহস্থালীর সকল দায়িত্বে সঠিক ও সহানুভূতির সাথে অংশগ্রহণ করাও স্বামীর দায়িত্ব।
আর্থিক সহায়তার অধিকারঃ
ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে যে, স্ত্রীর আর্থিক সহায়তার অধিকার রয়েছে। স্বামী তার স্ত্রীর খাবার, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণের দায়িত্বে আছেন। এটি তার স্বামীর দায়িত্ব, যে তাকে সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদান করবে। ইসলামে এটি স্ত্রীকে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
ইসলামে স্ত্রীর অধিকারগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রতিটি মুসলিম পুরুষের জন্য জরুরি। বিবাহ একটি পবিত্র সম্পর্ক, যেখানে উভয় পক্ষের অধিকার ও দায়িত্বের সমতা বজায় রাখা অপরিহার্য। স্ত্রীর এ অধিকারগুলো পালন করা কেবল তার মৌলিক অধিকার রক্ষা করাই নয়, বরং পরিবারে শান্তি, সমতা এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল পারস্পরিক সহানুভূতি ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতেই সফল হতে পারে। এ অধিকারগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা হয়, তাহলে দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে।