পাঁচতলা ভবনের দোতলায় রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের শাখা। নিচতলার হোটেলে দিনরাত চুলা জ্বলে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা মানুষের আনাগোনা। উপরন্তু শাখাটির স্ট্রং রুমের (যেখানে টাকার ভল্ট থাকে) দেয়াল আরসিসি ঢালাইয়ের নয়। একটি জেলা শহরে এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি ‘চেস্ট শাখা’ পরিচালিত হয়ে আসছে।
যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে সোনালী ব্যাংকের এই চেস্ট শাখায় নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের টাকা জমা রাখা হয়। অথচ এ ধরনের অন্তত তিনটি শাখা চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কর্তৃপক্ষ এগুলো স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এতেও সময় লাগবে এক থেকে দুই বছর। এ সময় পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই কার্যক্রম চালাতে হবে।
সারা দেশে সোনালী ব্যাংকের মোট শাখা এক হাজার ২০২টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শাখা পাওয়া গেছে ২৫৭টি। প্রধান কার্যালয় থেকে ৬৫টি টিম সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন চালিয়ে শাখাগুলোকে চিহ্নিত করে। অরক্ষিত এসব শাখার মধ্যে ২০১টিই নিচতলায় অবস্থিত। ৫৬টি ২য় ও ৩য় তলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শাখাগুলোর মধ্যে জেলা শহরে তিনটি, উপজেলা সদরে ৭৩টি নন-চেস্ট ট্রেজারি শাখা এবং ১৫টি ট্রেজারি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য শাখা ১৬৬টি।
অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শাখাগুলোর মধ্যে ৩১টি সেমি পাকা ও টিনশেড ঘরে অবস্থিত। টিনশেডে শাখাগুলোর স্ট্রং রুমের ছাদ পাকা। তবে এর অবকাঠামো মানসম্মত আরসিসি সমৃদ্ধ স্ট্রং রুম নির্মাণের জন্য উপযোগী নয়। আরও ৮৮টি শাখার স্ট্রং রুমে নিরাপত্তাজনিত চার দরজা এবং ৩৪টি শাখায় আয়রন সেফ নেই। সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা পরিদর্শন শেষে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গত জানুয়ারিতে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুট হয়। এর মাত্র দেড় মাস পর গত ১০ মার্চ বগুড়ার আমদীঘি শাখায় একই কায়দায় লুট হয় ৩২ লাখ টাকা। এই দুটি ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঝুঁকিপূর্ণ শাখা চিহ্নিত করে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শাখার নিরাপত্তায় কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গতকাল চিঠি পাঠিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত। চিঠিতে জানানো হয়, যেসব চেস্ট শাখার কার্যক্রম ভাড়া ভবনে চলছে, সেগুলো নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি ভবনের জমি কেনার প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১৮টি ভবনের জমি কেনার প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন। জমি কিনে ভবন নির্মাণ করে এসব শাখা স্থানান্তরে তিন থেকে চার বছর লাগবে। এমডি আরও জানান, যেসব শাখার পাশে আবাসিক ভবন রয়েছে, তা পুলিশি প্রহরায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিচ তলায় অবস্থিত কোনো শাখার ভল্ট রুম দোতলায় স্থানান্তরের সুবিধা না পাওয়ায় কিছু শাখা স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া কিছু শাখার স্ট্রং রুম সংস্কার করে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।