বাস্তবিক ইসলামী শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত এবং মাদ্রাসাগুলোকে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের হাফিজিয়া মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচি এবং সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত এবং পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কুরআন শিক্ষার নির্দেশনা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধর্মমন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, দেশের ১৮ হাজার ১৮৮ হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী জামায়াত ও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর দর্শন ও বই দ্বারা প্রভাবিত। যেহেতু হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জামায়াতের নীতি দ্বারা প্রভাবিত হন, তাই শিক্ষার্থীরা আসল ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। সুতরাং বাস্তবিক ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত এবং হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের দাপ্তরিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি এবং সিলেবাস পরিবর্তন সংক্রান্তÍ খসড়া অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শামীম আরও জানান যে হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে করে পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত অংশ গ্রহণ করতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষায় পাশ করলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে পারবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা গেছে যে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করে থাকেন।
হাফিজিয়া মাদ্রাসার নতুন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ জানান ভিন্ন কথা। হাফিজিয়া মাদ্রাসাকে শিক্ষা ব্যবস্থার মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে তার অজ্ঞতার কথা জানান। বিশেষ করে পাঠ্যসূচি ও সিলেবাসের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন বিষয়ে শ্যামল কান্তি তার অজ্ঞতার বিষয়টি পরিষ্কার তুলে ধরেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে বলে তিনি জানান।
হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি ও সিলেবাস পরিবর্তন প্রসঙ্গে অনেকটাই ক্ষিপ্ত হয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবীয়া বাংলাদেশের (দেশের অন্যতম বৃহৎ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাবোর্ড) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার বলেন, শুধুমাত্র হাফিজিয়া মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। এই ধরনের কার্যক্রম হাফিজিয়ার মাদ্রাসার চরম ক্ষতি করবে।
যদিও ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আটকে আছে। অনুমোদন পাওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবনাটি পাঠান। ঘটনার পরপরই দেশের ইসলামী নেতারা সরকারের এমন প্রস্তাবে বেশ হইচই করেন।
কওমী মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিকায়ন এবং সঠিক ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মূলত কওমী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনাটি পেশ করা হয়েছিল। এছাড়া কওমী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে যেসব সনদ দেওয়া হয় তার কোনো দাপ্তরিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই সনদের দাপ্তরিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা সংক্রান্ত বিষয়ও এই প্রস্তাবনায় সংযুক্ত ছিল।
এর আগে কওমী মাদ্রাসা পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের নামে মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের নামে সরকারের এমন পদক্ষেপর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেস্বর হেফাজত-ই-ইসলাম ও চট্রগ্রামের আল-জামিয়াতুল আলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়।