রসালো লিচুতে ছেয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর বাজার। বাজারে লিচুর উপস্থিতি জানান দেয় যে মধুমাস জ্যেষ্ঠ আসছে। নগরীর সাহেববাজার, রেলগেটসহ নগরীর বিভিন্ন প্রশস্ত সড়কের দুই পাশে বাহারি লিচু থরে থরে সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। লিচু টসটসে মিষ্টি হলেও দামটা বেশ তেঁতোই। তবে তাতেও কেনাবেচায় ভাটা পড়ছে না।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় লিচুর বাগান ৩৭০ দশমিক ৪ হেক্টর। বাগানের এলাকা প্রতিবছরই বাড়ছে। এবার জেলায় লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন। তবে দীর্ঘ মেয়াদি খরায় রাজশাহীতে এবার লিচুর আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। এতে উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে বলে লিচু চাষীরা আশঙ্কা করছিলেন। তবে ফল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, খরা গেলেও উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না।
রাজশাহী ফল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন বলেন, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের পরও এবার রাজশাহীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত মাদ্রাজি, বোম্বাই, কাদমি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এসব লিচুর মোট উৎপাদনও বেশি, আবার আকারেও বড়।
আলীম উদ্দিন বলেন, চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তা থেকে রাজশাহীতে আগাম জাতের বারি-১ লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। এরপর আসবে বারি-২ ও বারি-৩। বারি জাতের লিচু এক থেকে দেড় সপ্তার মধ্যে পেকে যায়। এসব জাতের লিচু থাকবে জুন মাসের প্রথম সপ্তা পর্যন্ত।
এরই মাঝে আসবে বোম্বাই, চায়না-৩, কাদমি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়িসহ অন্য জাতের লিচু। সব মিলিয়ে এসব লিচু বাজারে থাকবে আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাজারে লিচুর আমদানি কম থাকায় দামও আকাশছোঁয়া। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।
রাজশাহী পবা উপজেলার লিচু চাষি আকবার হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে তার লিচুর গাছ আছে। চলতি মৌসুমের তিনি লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বাগানটি বিক্রি করেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নূরুল আমীন বলেন, আম যেমন পুরো দুই মাস ধরে বাজারে পাওয়া যায়, লিচুর ক্ষেত্রে সময়টা বেশ কম। লিচু গাছে পেকে গেলে আর বেশি সময় রাখা যায় না। লিচু এখনো সেভাবে প্রক্রিয়াজাত না হওয়ায় শুধু সরাসরি ভোগের কাজেই লাগে। লিচু প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে জানান তিনি।