ব্যবসা পর্যায়ে ৪ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দেওয়ার বিধান থাকলেও তা না দিয়েই যশোরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল আকিজ সিমেন্ট। এর মাধ্যমে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পাওনা আদায়ে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দাবিনামা জারি করেছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি যশোর ভ্যাট কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ কর্মকর্তারা নওয়াপাড়া ঘাট এলাকায় আকিজ সিমেন্টের প্রতিষ্ঠান পরির্দশন করেন। এ সময় ভ্যাট কর্মকর্তারা দেখতে পান, আকিজ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন নেওয়ার পর থেকে বিক্রয় সংক্রান্ত তথ্য, প্রদেয় রাজস্ব, গৃহীত রেয়াত ও ট্রেজারি জমার হিসাব সংরক্ষণ না করেই বিধি বহির্ভূতভাবে নিজস্ব চালানপত্রের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। যা মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৬, ১৫, ৩১ ও ৩২ ধারা এবং মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা ১৯৯১ এর বিধি ৯, ১৬, ২২ ও ২৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এবং একই আইনের ৩৭ ধারা মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ।
পরবর্তী সময়ে কর্মকর্তারা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব সম্বলিত একটি রেজিস্ট্রারসহ কিছু ডেলিভারি চালান আকিজ সিমেন্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জব্দ করে। জব্দ করা রেজিস্ট্রার ও চালান নিরীক্ষা করে দেখতে পায়, ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কোনো ভ্যাটই দেয়নি আকিজ সিমেন্ট। নিয়মানুযায়ী, ব্যবসা পর্যায়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে, ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির ওপর ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। যা প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭০ হাজার ৮১৯ বস্তার বিপরীতে ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৪৯ বস্তার বিপরীতে ১ কোটি ৫৯ লাখ ও ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ২০ হাজার বস্তার বিপরীতে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব না দেওয়ায় ১৯ মার্চ প্রথম তাগিদপত্র ও ২৭ মার্চ দ্বিতীয় তাগিদপত্র ইস্যু করা হয়। এরপর ২০ এপ্রিল বিষয়টি অধিক পর্যালোচনার জন্য কমিশনারের কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস ও কোম্পানি এ্যাফেয়ার্স) রুহুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিচালক (কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স) আব্দুর রাজ্জাক।
এ প্রসঙ্গে আকিজ সিমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্র্যান্ড এন্ড ট্রেড মার্কেটিং, পেয়ার আহমেদ তুষার দ্য রিপোর্টকে জানান, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সিমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ফ্যাক্টরি থেকে তাদের উৎপাদিত সিমেন্ট প্রধানতঃ নৌপথে ভ্যাট চালান মূসক-১১ ইস্যু এর মাধ্যমে ১৫% ভ্যাট দিয়ে সিমেন্ট সরবরাহ করে থাকে এবং ঘাটে ট্রলার থেকে ডিলার ও রিটেইল পর্যায়ে সেই সব পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি তাদের প্রতি ব্যাগ সিমেন্ট সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মানুযায়ী মূসক-১১ এর মাধ্যমে ১৫% ভ্যাট প্রদান করে ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য বের করে থাকে। সম্মানিত ভ্যাট কমিশনারেট এর অভিযোগকে সম্মান প্রদর্শন করে এ বিষয়ে বলতে চাই, তাহলে শুধু আকিজ সিমেন্ট কেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক টিসিমেন্ট কোম্পানিকে এক ব্যাগ সিমেন্টের ক্ষেত্রে দুইবার করে ভ্যাট প্রদান করতে হবে।