ঠাকুরগাঁওয়ে ইট ভাটার গরম বাতাসে প্রায় ১০ একর জমির উঠতি বোরো ধান ঝলসে গেছে । ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার জেলার সদর উপজেলার মাদারগন্জ গ্রামে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ও স্থানীয়রা জানায়, গত বুধবার ভোরে এইচআর ব্রিক্স নামে ইট ভাটার শ্রমিকরা ঢাকনা খুলে দিলে সেখান থেকে গরম বাতাস নির্গত হয়ে ভাটার আশেপাশের প্রায় ১০ একর বোরো ক্ষেত ঝলসে যায়। এতে স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষকের প্রায় ১০ একর জমির উঠতি বোরো ধান পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের বলেও জানান ক্ষতিগ্রস্থরা। এ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শনু মোলাহ, আজাহার আলী, মুকুল মিয়া জানান, তাদের জমির ধান প্রায় পাকার উপক্রম হয়েছিল। আর কয়েকদিন পরেই তা কেটে ঘরে তুলবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু ইট ভাটা তাদের সে স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। এখন জমিতে ধান বলতে কিছু নেই । যা আছে তা গবাদি পশুর খাবারও হবে না। তারা জানান, কেউবা জমি বর্গা নিয়ে ধান করেছিলেন আবার কেউবা স্থানীয় এনজিও ও বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন তুলে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন।
এ গ্রামের একজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আইনুল মিয়া বলেন, মুই লোন নেহেনে ধান কইছিনু। চিন্তা কইছিনু এইবার ভাল ধান হইছে, ধান বেচে যা লাভ হবে তা দেহেনে লোন শোধ করিম। আর বার মাসের খাবার থাকিবে বাড়ি। কিন্তু মোর খাবারও গেল, টাকালাও গেল। এলা মুই লোন শোধ করিম কেং কোরে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে এখন চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
আলতাফুর রহমান নামে একজন চাষি জানান, তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান রোপন করেছিলেন। ঐ জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। কিন্তু সে টাকা ওঠার আর কোন সম্ভাবনা নেই। অথচ ধার কর্জ করে জমিতে সার বিষ প্রয়োগ ও সেচ প্রদান করেন। এরকম ১০-১৫ জন এ গ্রামের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অবিলম্বে তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ঐ জমি পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, আমার জরিপে ৮ -৯ একর জমির বোরো ধান ঝলসে গেছে। আমি বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালককে অবগত করেছি এবং কৃষকরা যেন ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধও করেছি।
এ ব্যাপারে ইট ভাটার মালিক হাফিজুর রহমান চুন্নু জানান, যেসব কৃষকের জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে তা তিনি সাধ্য মতো পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।