দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ৮৫ শতাংশ গুঁড়া দুধই ভেজাল। বাজারে পূর্ণ ননীযুক্ত ও ননীবিহীন গুঁড়া দুধের দামে পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে পূর্ণ ননীযুক্ত দুধে ননীবিহীন দুধ মিশিয়ে তা বাজারজাত করছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় গুঁড়া দুধে এমন ভেজাল শনাক্ত হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে গুঁড়া দুধে ভেজাল শনাক্ত হলেও ভিন্ন কথা বলছে মান নিয়ন্ত্রণকারী আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। ফলে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে দেশে প্রধান শিশুখাদ্য হিসেবে বহুল ব্যবহৃত গুঁড়া দুধে অতিমাত্রায় ভেজাল শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) ১৩টি ভিন্ন কোম্পানির গুঁড়া দুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে পাঠান। পরীক্ষা শেষে এর ১১টি নমুনায় অর্থাৎ ৮৪.৬২ শতাংশে ভেজাল ধরা পড়ে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়া দুধে মিল্ক ফ্যাট থাকার কথা কমপক্ষে ২৬ শতাংশ। কিন্তু জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ নমুনাগুলোয় নির্ধারিত মাত্রার কম মিল্ক ফ্যাট পাওয়া গেছে। এর কারণ মূলত পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়া দুধের মধ্যে ননীবিহীন দুধ মেশানো। আর কোনো খাদ্যদ্রব্য থেকে কিছু তুলে নিয়ে তাতে অতিরিক্ত কিছু যোগ করা হলে সেটি ভেজাল বলে শনাক্ত হবে। গুঁড়া দুধে সঠিক মাত্রার মিল্ক ফ্যাট না পাওয়ায় সেটিও ভেজালের তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
ননীবিহীন গুঁড়া দুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ননীবিহীন গুঁড়া দুধ (স্কিম মিল্ক পাউডার) ৪২০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৭০-৭১০ টাকায়।
এদিকে দেশের একমাত্র পণ্য মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সূত্রে জানা গেছে, গুঁড়া দুধে ভেজাল শনাক্তে কয়েকটি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এগুলো হলো মিল্ক ফ্যাট, আর্দ্রতা, মিল্ক প্রোটিন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উৎপাদন হয় কি-না। পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়া দুধে মিল্ক ফ্যাট থাকতে হবে ২৬ শতাংশ, পনির পাঁচ শতাংশ ও মিল্ক প্রোটিন ৩৪ শতাংশ। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, আমদানি করা গুঁড়া দুধ বন্দরে আসার পর বিএসটিআই ও আণবিক শক্তি কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কাস্টমসের ছাড়পত্র নিতে হয়। এ তিন বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিনের কৌটায় আসা গুঁড়া দুধ বন্দর থেকে খালাস করা হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব দুধ ভেজাল করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে বিএসটিআই পরিচালক (মান) কমল প্রসাদ দাস বলেন, ‘আমাদের ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত। নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা পদ্ধতি সঠিক থাকতে হবে। অন্য ল্যাবরেটরিতে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার একই পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত, যাতে মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. সুবিমল সিংহ চৌধুরী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের (স্বাস্থ্য পরিদর্শক) পাঠানো গুঁড়া দুধের ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বেলাল হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষ উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পেতে পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়া দুধ ব্যবহার করে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দুধ থেকে ফ্যাট তুলে নেয়ায় পুষ্টির মাত্রা কমে যায়। এ দুধ খাওয়ায় তেমন কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও শিশুদের পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। মানবকন্ঠ