ভারতের নবনির্বাচিত বিজেপির নরেন্দ্র মোদির সরকার তার পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলার ফলে শেখ হাসিনার সরকারকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদী।
কারণ মোদি মনে করেন, “ঢাকার মাটি মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে গেলে ভারতেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।”
শনিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের নীতি সম্পর্কে সারকথা তুলে ধরা হয়।
ইতিমধ্যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে দু’দিনের সফরে ঢাকা পাঠাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে, দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই হবে সুষমার প্রথম একক বিদেশ সফর। এ সময় সুষমার হাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণপত্রও পাঠাবেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করে আনন্দবাজার জানায়, “নিজের শপথের সময়ে সমস্ত সার্ক দেশের রাষ্ট্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেনজির একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদী। সেই মিনি-সার্ক শীর্ষ বৈঠকের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, অতঃপর? উত্তরের জন্য অবশ্য পক্ষকালও কাটাতে হল না। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।”
এ সফরে তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি-সহ বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া সমস্ত বিষয় নিয়ে হাসিনা এবং বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর সফরে বিস্তারিত আলোচনা করবেন সুষমা।
তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই সফর সম্পর্কে কিছু জানাননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবারুদ্দিন বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে জানান, “বিদেশনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জুন মাসে তার প্রথম সফরে ভুটানে যাচ্ছেন। তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন প্রতিবেশী আরো একটি রাষ্ট্রে।”
মোদীর পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন মোদী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি সংগঠন, আইএসআই এবং জামাতে ইসলামির ভারত-বিরোধী রাজনীতির স্বরূপটি ঠিক কী, সেটাও বুঝে নিতে চেয়েছেন।”
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কারণ ব্যাখ্যা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে এক আলোচনায় নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “ঢাকার মাটি মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে গেলে ভারতেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।”
আনন্দবাজার জানায়, “ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির দমনে গত পাঁচ বছরে ঢাকা যে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে, হাসিনার সঙ্গে টেলিফোন-আলাপে মোদী তার প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে যাতে এই ভূমিকা অক্ষুণ্ণ থাকে, তিনি সেই অনুরোধও করেন হাসিনাকে।”
এর আগে শপথের পরদিন ২৭ মে দিল্লিতে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ও মোদীর আলোচনাতেও তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
মোদির সাথে আলোচনায় শিরিন জানিয়েছেন, দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে এই দু’টি চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি।
তবে মোদী বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন বলেই কথা দিয়েছেন।
পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “নিরাপত্তা, শক্তি ও সীমান্ত-সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রে ঢাকা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বৈঠকে তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।”
তারপরেই চুক্তি দু’টি রূপায়ণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সুষমা স্বরাজকে নির্দেশ দেন মোদী।
তবে চুক্তি দু’টির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে আসা সুষমার ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে যে মোদীর নতুন সরকার আন্তরিক, সে কথাই সুষমা তার এ ঢাকা সফরে স্পষ্ট করবেন।
মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি মনমোহন সিংহ। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী পানিবণ্টন হলে রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আনন্দবাজার মন্তব্য করে জানায়, মমতার আপত্তি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এগোবেন কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সীমান্ত চুক্তিতে নীতিগতভাবে রাজি ছিলেন লালকৃষ্ণ আদভানী এবং অরুণ জেটলির মতো বিজেপি নেতারা। কিন্তু দলের আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ শাখার আপত্তিতে চুক্তিটি আটকে যায়।
ওই চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। বিজেপি বেঁকে বসায় এর জন্য প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করে উঠতে পারেনি মনমোহন সরকার। সুষমার ঢাকা সফরের পর রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও এবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন মোদী।