সাধারণত পণ্য-সেবা ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়েই নিলাম হয়ে থাকে। তবে বিশ্বের একজন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে বসে খাওয়ার ব্যাপারও যে নিলামের একটি বিষয়বস্তু হতে পারে, তা অনেকেরই জানা নেই। বিশ্বের চতুর্থ সেরা ধনী ওয়ারেন বাফেটই হলেন এই নিলামের মধ্যমণি, যিনি সারা দুনিয়ায় ‘বিনিয়োগগুরু’ ও আমেরিকায় ‘ওরাকল অব দ্য ওমাহা’ বা ‘ওমাহা শহরের ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা’ হিসেবে পরিচিত।
বাফেট নিছক ব্যবসায়িক লাভের জন্য এই নিলাম ডাকেন না। দাতব্যকাজে সহায়তা করতেই তিনি দেড় দশক ধরে এই নিলামের আয়োজন করে আসছেন। এতে যিনি সর্বোচ্চ দাম হাঁকাতে পারেন, তিনি বাফেটের সঙ্গে এক দিন মধ্যাহ্নভোজনের সুযোগ পান।
অনলাইনের মাধ্যমে গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে এবারের নিলাম। এটি হলো ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজনের ১৫তম নিলাম। এতে বিজয়ী হয়েছেন সিঙ্গাপুরের অ্যান্ডি চুয়া। তিনি নিলামে সর্বোচ্চ ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার দর হাঁকিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার সমান (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা হিসাবে)। বদৌলতে তিনি বাফেটের সঙ্গে নিউইয়র্ক শহরের স্মিথ অ্যান্ড ওলেনস্কি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজনের আমন্ত্রণ পাবেন।
মজার ব্যাপার হলো, ওই হোটেলে সবচেয়ে দামি ও সব পদের পানীয় এবং খাবার খেলেও মাত্র ৪৩৭ ডলার বা বাংলাদেশের ৩৪ হাজার ৫২৩ টাকার মতো খরচ হবে।
বাফেট এই নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অন্যতম সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র সান ফ্রান্সিসকোর একটি দাতব্য বা মানবহিতৈষী প্রতিষ্ঠান গ্লাইড ফাউন্ডেশনকে। প্রতিষ্ঠানটি সান ফ্রান্সিকোতে দরিদ্র ও গৃহহীনদের খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, গৃহায়ণ ও পুনর্বাসন সুবিধা এবং চাকরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
গত ১ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলামটি পরিচালনা করে একই শহরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ই-বে। গত বছরের সর্বোচ্চ দর (১০ লাখ এক হাজার ডলার) থেকেই শুরু হয় এবারের দর হাঁকানোর প্রতিযোগিতা। তবে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই নিলাম জমে ওঠে শেষ দুই ঘণ্টায়।
নিলামে বিজয়ী অ্যান্ডি চুয়া নিউইয়র্ক শহরের স্মিথ অ্যান্ড ওলেনস্কি রেস্তোরাঁয় ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ উপলক্ষে কয়েক ঘণ্টা কাটাতে পারবেন। তিনি সঙ্গে সাতজন স্বজন বা বন্ধুকে নিয়ে যেতে পারবেন। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে মধ্যাহ্নভোজের তারিখ।
বাফেট জানিয়েছেন, মধ্যাহ্নভোজের সময় তিনি অ্যান্ডি চুয়ার সঙ্গে নিজের পরবর্তী বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছাড়া অন্য সবকিছু নিয়েই কথা বলতে রাজি আছেন।
বাফেট তাঁর প্রথম স্ত্রী সুসানের মাধ্যমে গ্লাইড ফাউন্ডেশনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে এই নিলাম আয়োজন করছেন। সুসান ২০০৪ সালে মারা যান। আগের নিলামগুলো থেকে এক কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
আগের কয়েকটি নিলামে বিজয়ী উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন: ২০০৩ সালে হেজ ফান্ড ম্যানেজার ডেভিড আইনহর্ন (আড়াই লাখ ডলার), ২০১০ ও ২০১১ সালে টেড ওয়েশ্চলার (মোট ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার)। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ওয়েশ্চলারকে নিজের বার্কশায়ার হ্যাথওয়েতে নিয়ে যান, যিনি এখন সেখানে পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে চারবারের বিজয়ীরা প্রত্যেকেই ২০ লাখ ডলারের বেশি দর হাঁকান। তবে সর্বোচ্চ ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ডলার দর ওঠে ২০১২ সালের নিলামে।
বিশ্বের একজন সেরা ধনী হলেও ওয়ারেন বাফেট যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যের বৃহত্তম শহর ওমাহার একটি সাদামাটা বাড়িতেই বসবাস করেন। তিন বেডরুমের এই বাড়িটি তিনি ১৯৫০ সালে কিনেছিলেন।
বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর তৈরি করা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় ওয়ারেন বাফেট টানা দ্বিতীয়বারের মতো চতুর্থ স্থানে আছেন। তাঁর মোট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের মালিক এবং বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটসের ব্রিজ পার্টনার (তাস খেলার অংশীদার)।
বিশ্বসেরা ধনীদের তালিকায় বাফেটের সামনে থাকা তিনজনের সম্পদের মোট মূল্যমান হলো যথাক্রমে—যুক্তরাষ্ট্রের বিল গেটস সাত হাজার ৬০০ কোটি ডলার, মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম হেলু সাত হাজার ২০০ কোটি ডলার ও স্পেনের অ্যামানসিও ওর্তেগা ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
সূত্র: রয়টার্স, চ্যানেল নিউজএশিয়া, সিএনবিসি, সিবিএস।
n দাতব্যকাজে সহায়তা করতেই বাফেট দেড় দশক ধরে এই নিলাম আয়োজন করছেন
n এবারে সিঙ্গাপুরের অ্যান্ডি চুয়া সর্বোচ্চ ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার দর হাঁকিয়ে জিতেছেন
n যে রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ হবে সেখানে সবচেয়ে দামি সব পানীয় ও খাবার খেলেও ব্যয় হবে বাংলাদেশের ৩৪ হাজার ৫২৩ টাকা
n অ্যান্ডি চুয়ার সঙ্গে নিজের পরবর্তী বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছাড়া সবকিছু নিয়েই কথা বলবেন