এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁদের অর্জনটা ঈর্ষণীয়। এশীয় ফুটবলে তিন-তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তো আর কম কিছু নয়। এর ওপর চারবার বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিয়েছে সৌদি আরব। সেই হিসাবে সৌদি আরবকে এশিয়ার সফল ফুটবল দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বলতেই হবে।
এ তো গেল খেলার কথা। এই ফুটবলকে কেন্দ্র করেই লুকিয়ে আছে সাধারণ মানুষের বদলানোর গল্প, দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থেকে শাসকদের বিরুদ্ধে সাধারণের ফুঁসে ওঠার ইতিহাস।
সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুরুতে ফুটবল রাজপরিবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল। এ কারণে শুধু খেলা নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগে সৌদিরা নির্বিকার, নিশ্চুপ থাকত। দেশটির স্টেডিয়ামগুলোও দখলে থাকত শাসক-পরিবারের হাতে। রিয়াদভিত্তিক দুটি ফুটবল ক্লাব আল-হিলাল ও আল-নাসেরও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এখন বদলে যাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপট। সাহসী হয়ে উঠছেন সৌদির সাধারণ নাগরিকেরা। কথা বলছেন নানা বিষয় নিয়ে।
দেশটির একজন অধ্যাপক বলেন, ‘সৌদি আরবে ফুটবল এখন মানুষের বাকস্বাধীনতার একটি বিরল জায়গা।’
১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সৌদি অ্যারাবিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। এটি প্রতিষ্ঠা করেন তত্কালীন সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন ফয়সাল আল সৌদ। বর্তমানে এই ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল হার্বি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পেরোতে ব্যর্থ হয় সৌদি আরব। এর প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ ফেডারেশনের সভাপতি যুবরাজ নাওয়াফ বিন ফয়সালের বিরুদ্ধে চলে যায়। পরে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন তিনি। একই কারণে গত বছর রিয়াদভিত্তিক আল-নাসের ক্লাবের প্রধান যুবরাজ ফয়সাল বিন তুর্কিকে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করেন সমর্থকেরা। এতে তাঁরা ব্যর্থ হলেও শেষ পর্যন্ত থেমে থাকেনি প্রতিবাদ। আল-নাসেরের সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রিন্স ফয়সাল বিন তুর্কির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কোনো রাজপরিবারের সদস্য ও একটি ক্লাবের সভাপতির মতো কোনো ব্যক্তির প্রতি এভাবে জনসমক্ষে অসন্তোষ প্রকাশ করা সৌদি আরবে বেশ কয়েকটি বিরল ঘটনার মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনা। এভাবেই ফুটবলকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে নিশ্চুপ থেকে বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন সৌদির নাগরিকেরা।
যুবরাজ নাওয়াফ বিন ফয়সাল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ওই পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করেন সাবেক গোলরক্ষক আহমেদ ঈদ আল-হার্বি। রাজপরিবারের বাইরে তিনিই প্রথম সাধারণ ব্যক্তি যে কিনা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের ঢেউ বয়ে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাবটা আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। কথা বলার জন্য, অসন্তোষ প্রকাশের জন্য বা জনগণকে একত্র করতে তাঁদের সামনে এখন অনেক পথ। যেকোনো বিষয় নিয়ে তাঁরা এখন টুইটার, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে কথা বলছেন। সে কথা খুব সহজেই ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার কাছে। এভাবে তাঁরা শাসকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, ফুটবলকে কেন্দ্র করে তাঁরা যদি কোনো অন্যায় কাজ (ফাউল) করেন, তবে তাঁদেরও লাল কার্ড (রেড-কার্ড) দেখানো হবে।