‘আমার চেয়ে লম্বা না হোক, অন্তত আমার সমান উচ্চতার তো হওয়া চাই’—পাত্র খোঁজার বেলায় এই একটাই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন আফরীন (ছদ্মনাম)৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক অবস্থা, ক্যারিয়ার এগুলোয় না হয় একটু ছাড় দেওয়া যাবে৷ কিন্তু উচ্চতায়, একদমই না৷ কেন? ‘পাশাপাশি দাঁড়ালে কেমন লাগবে দেখতে!’
অভিনয়শিল্পী পিয়ার কথা আবার ভিন্ন৷ গড়পড়তার চেয়ে বেশ লম্বা হলেও সঙ্গীর উচ্চতা নিয়ে মোটেই ভাবেন না তিনি; যদিও খুব শিগগির পিয়ার জীবনসঙ্গী হতে যাচ্ছেন যিনি, তিনি পিয়ার চেয়ে এক ইঞ্চি লম্বা৷ ‘আমি তো সব সময় হিল পরে ঘুরে বেড়াই৷ আমার উচ্চতা পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি৷ আমাকে ওর চেয়ে লম্বাই দেখায়৷ কিন্তু এ নিয়ে আমার বা ওর কারোরই মাথাব্যথা নেই৷’ সঙ্গীটি আর যা-ই হোক, তাঁর চেয়ে খাটো নন৷ এ জন্যই কি পিয়া একরকম উড়িয়েই দিলেন প্রশ্নটা? ‘আমি শুধু দেখেছি আমার সঙ্গী যিনি হবেন, তিনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন কি না আর তাঁর পরিবার শিক্ষিত কি না৷ এর বাইরে আর কিছুই ভািবনি৷’
উচ্চতার পার্থক্য নিয়ে এই যে চিন্তাভাবনা, এর পেছনে একটাই কারণ বলে মনে করেন পিয়া৷ মেয়েদের দমিয়ে রাখার একটা উপায় এটি৷ মেয়েটি তুলনামূলক খাটো হলে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ—এ রকম মানসিকতা কাজ করতে পারে বলে তাঁর মনে হয়৷ তাহলে মেয়েরাই কেন চান যে সঙ্গীটি হবে তাঁর তুলনায় লম্বা? ‘মেয়েরাই তো অনেক সময় নিজের দুর্দশার কারণ হয়৷ অনেকে এটা বোঝেই না৷’ বলেন পিয়া৷
তবে উচ্চতার পার্থক্যের কারণেই বিয়ে হয়নি—এমনটা নিজের পরিবারেই দেখেছেন পিয়া৷ ‘আমার ফুপুরা সবাই পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চিরও বেশি লম্বা৷ এক ফুপুর বিয়ের প্রস্তাব এলে দেখলাম, সবই মিলছে, কিন্তু ছেলে ফুপুর তুলনায় খাটো বলে ফুপু নিজেই নাকচ করে দিলেন প্রস্তাবটা৷’
বিয়ে মানেই হাতের পাঁচ আঙুল সমান হওয়া চাই৷ পরিবারের আয়োজনে বিয়ে হলে একদম সব বিষয়ই মনের মতো হতে হবে৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এমনই দেখেছেন বলে জানান মনিকা পারভীন৷ মনিকা’স বাঁধন নামে বিয়ের সম্বন্ধ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি৷ ‘মেয়েরা লম্বা হলে বর পাওয়া মুশকিল৷ এমনই আমাদের প্রচলিত ধারণা৷ তবে কেউ এটা সরাসরি বলে না৷ এমন একটা ভাব, এটা আবার বলার কী আছে, মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে খাটো হওয়াই স্বাভাবিক৷’ তিনি বলেন৷ তবে মেয়েদের বেলায় ছাড় দেওয়ার মনোভাবও বেশি বলে মনে করেন তিনি৷ স্ত্রী লম্বা হলে তাঁর পাশে মানাবে না, এই যুক্তির কথাই সাধারণত ছেলেরা বলেন৷ তবে মেয়ে সুন্দরী হলে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেন অনেকে৷ আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক অবস্থান মিলে গেলে মেয়েরা সাধারণত উচ্চতার পার্থক্য নিয়ে আর আপত্তি করেন না৷
তবে অন্য সবদিক, বিশেষ করে মানসিক মিল যদি হয়েই যায়, তাহলে উচ্চতা নিয়ে না ভাবাই ভালো৷ এ সময়ের ছেলেমেয়েদের এমনই পরামর্শ দেন মনিকা৷
আমার স্ত্রী আমার চেয়ে লম্বা! কিংবা স্বামীটি আমার চেয়ে খাটো—এমন মানসিক দ্বন্দ্বে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা হলিউডেই তাকান না হয়৷ টম ক্রুজের সাবেক দুই স্ত্রী নিকোল কিডম্যান ও কেটি হোমস দুজনেই তো তাঁর চেয়ে লম্বা৷ আবার নিকোল কিডম্যান পরে যাঁকে বিয়ে করেছেন, সেই কিথ আরবানও নিকোলের চেয়ে খাটো৷ বলতে পারেন, টম ক্রুজের ঘর তো ভেঙেছেই, কিন্তু তার কারণ আর যা-ই হোক, উচ্চতার পার্থক্য নয়৷ হলে তো সাংবাদিকেরা ঠিকই খুঁচিয়ে বের করে ফেলতেন!