সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ ও ফেনীসহ সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের বিতর্কিত ঘটনায় বিব্রত ক্ষমতাসীণ আওয়াৃমী লীগ। এ থেকে উত্তরণে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। দল থেকে বির্তকিত ব্যাক্তিদের বাদ দিয়ে ও অনুপ্রবেশকারীদের অপসারণ করে নিজেদেরকে বিশুদ্ধ করতে চায় তারা। এ জন্য সাংগঠনিক সফরসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে অভিযানে নেমেছে দলটি।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দলের মধ্যে নানা ধরণের সুবিধাবাদীরা স্থান করে নিচ্ছে। তারা বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। তাই এদের অপসারণ করে বিশুদ্ধতা অর্জন করে দলকে সুসংগঠিত করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে দলের বেশকিছু প্রভাবশালী নেতা জানিয়েছেন, দল থেকে আগাছা, পরগাছা সমূলে উৎপাটনের মাধ্যমে দলকে বিশুদ্ধকরণ করা হবে। এ বিষয়ে দলের সর্বশেষ ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বেশকিছু গুরত্বপূর্ণ বৈঠকও হয়েছে। যাতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর করছে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। করা হচ্ছে সম্মেলন। দেওয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। বছরব্যাপী এ সব কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন দলের হাইকমান্ড।
জানা গেছে, এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিতর্কিত ব্যাক্তিদের দল থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে খোজ নেওয়া হচ্ছে এবং এদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।
এরই মধ্যে রবিবার বিকেলে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলের সভাপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু গুরত্বপূর্ণ কৌশল এ বৈঠকে নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশেরই কমিটি নেই। যে যার মত চলছে। এতে নিজেদের মধ্যে তৈরী হচ্ছে আন্তোকোন্দল ও সহিংসতা। এ থেকে দলকে বাঁচাতে বৈঠকে বেশকিছু জেলায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের মধ্যে সারা দেশের জেলাগুলোতে সম্মেলন শেষ করারও টার্গেট নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
এ ব্যপারে দলের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংসহ বিভিন্ন ফোরামে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, দলের অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আমাদের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলকে বিশুদ্ধ করতে যে সব জেলায় সম্মেলন করা হয়নি সেসব জেলায় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের এসব কাউন্সিলের মাধ্যমে বিতর্কিতদের ঝেড়ে ফেলা হবে।
তিনি বলেন, এ ব্যপারে আমাদের দলের অবস্থান স্পষ্ট। সুশাসনের বিষয়ে কারও সঙ্গে আমরা আপস করবনা। তাই দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কেউ যদি এ সুশাসনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেনী সারা দেশের আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। দল থেকে আগাছা-পরগাছা, হাইব্রিড-ফরমালিন দেয়া নেতাদের সমূলে উৎপাটন করা হবে।
তিনি বলেন, দলে বসে মাস্তানি-খুনোখুনি করা চলবে না। নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর হত্যাকান্ডের ঘটনার তদন্তে যে দোষী হবে, তাকেই শাস্তি পেতে হবে।
এদিকে দল থেকে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বেশকিছু ফোরামেই তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, যারা দলের এ সময় দলের বিতর্কিত কর্মকান্ডে যারাই জড়িত থাকবে তাদের চিহ্নিত করে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রবাসীদের এ ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে গণভবনে নিজের সংবাদ সম্মেলনেও দলকে পরিশুদ্ধ করতে ব্যবস্থা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।