থমকে আছে বিএনপি!

-BNP-Logoদল গুছিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। উপজেলা নির্বাচন শেষ, তবে এখনো দল গোছানো শেষ করতে পারেনি দলটি। বরং দলে পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা গতি হারিয়েছে। সহসা রাজপথে আন্দোলনে যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা নেই দলটির।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই নির্বাচনের এক মাসের মাথায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দল গুছিয়ে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঘোষণার একদিন পর দলের স্থায়ী কমিটির সভায় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি এবং ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির সব জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। দল গুছিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি আবার আন্দোলনে নামবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। গত চার মাসে শুধু শ্রমিক দলের নতুন কমিটি করা হয়েছে। আর কয়েকটি জেলার কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শ্রমিক দলের কাউন্সিল হয়েছে। অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে কিছু জেলা কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়া এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটি করতে বলেছিলেন। কিন্তু চার মাসেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়ে উঠলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়।

এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারির স্থায়ী কমিটির সভায় ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে খালেদা জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন, নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগার থেকে বের হলে করা হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। সূত্র জানায়, ছাত্রদল পুনর্গঠনের সে উদ্যোগও থেমে গেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগার থেকে বের হয়েছেন কিন্তু কমিটি পুনর্গঠনের কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

গত এপ্রিলে এসে জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেন খালেদা জিয়া। ওই মাসে পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম উত্তর, নওগাঁ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ উত্তর, সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করে দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এখন সেই উদ্যোগও থেমে আছে। এখন কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ এই সপ্তাহে কেন্দ্র থেকে রংপুর জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিক্ষোভ করছেন।

জানতে চাইলে জেলা কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়নি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। সারা বছর ধরেই এ প্রক্রিয়া চলবে। প্রথম দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কিছু কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন জেলায় কমিটি করার কাজ চলছে। সর্বশেষ রংপুরের কমিটি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলনে নামার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। মূলত বিএনপির আন্দোলন এখন প্রেসক্লাবকেন্দ্রিক কিছু আলোচনা আর সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঢাকায় খালেদা জিয়ার সমাবেশে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে দেশব্যাপী কিছু বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হলেও সেগুলো খুব ভালোভাবে পালিত হয়নি।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএনপি এখনই রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে নয়। এখন দলটি ‘ধীরে চলো’ নীতিতে আছে। দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশ দ্রুত কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে। তবে তা হচ্ছে না। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ আন্দোলনে আবার গতি সঞ্চার করার চেষ্টা করবে দলটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলন মানে শুধু হরতাল-অবরোধ নয়। জনসংযোগ, আলোচনা, বক্তব্য সবই আন্দোলনের অংশ। বিএনপি আন্দোলনেই আছে। সময় অনুযায়ী এর গতি-প্রকৃতি কী হবে দলীয় ও জোটগতভাবে সেই কৌশল নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *