কোচ হওয়ার আগেই তাকে নিয়ে অনেক প্রসংশার ফুলঝুরি ঝরেছে। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রমই হবেন। বাংলাদেশের মাটিতে নেমে তার কথায় সেই আভাসই রাখলেন। হাতে খুব বেশি সময় নেই, ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অন্যদিকে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। তাই অস্ট্রেলিয়াতে লড়াইয়ে নামার আগে এই অল্পসময়ে কি করবেন কোচ? গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ মাধ্যমকে স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন কি নেই তা নিয়ে তিনি ভাবতে রাজি না। যা আছে তা থেকেই বের করে নিতে চান সর্বোচ্চ সফলতা। হাথুরু বলেন, ‘এখন আমার কি করার আছে? সময় তো আমি কিনতে পারবো না। আমাদের কী নেই, সেদিকে তাকানোর লোক আমি না। আরও আট মাস সময় আছে, এই সময়ে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমরা।’ খুব স্বল্প ভাষায় জানিয়ে দিলেন কতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। সোমবার রাতেই বাংলাদেশে আসেন শ্রীলঙ্কার হাথুরুসিংহে। গতকাল হাজির হয়েছিলেন টাইগারদের অনুশীলনেও।
অস্ট্রেলিয়াতে দীর্ঘদিন তিনি কাটিয়ে এসেছেন কোচিং নিয়ে। এবার হাল ধরেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের। তবে জাতীয় দলের উন্নতির পাশাপাশি তার চোখ থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি’র উপরও। দুইবছর পর তিনি বাংলাদেশকে একটি ধারাবাহিক জয় পাওয়া দেশের তালিকায় রাখতে চান। নিজের লক্ষ্যটা তিনি এভাবেই নির্ধারণ করেছেন। এই বিষয়ে কোচ বলেন, ‘পুরো দলের সবদিকের উন্নতি করাই লক্ষ্য আমার। একই সঙ্গে বিসিবি’র নানা উন্নতির দিকেও আমার দৃষ্টি থাকবে। এই-ই আমার প্রধান পরিকল্পনা। আমাদের নিয়মিত সাফল্য বয়ে আনতে হবে। দু’-একটি সিরিজে সফল হলেই চলবে না। আমার দুই বছরের মেয়াদ শেষ হলে বাংলাদেশকে আমি এমন দল হিসেবে দেখতে চাই, যারা দেশ ও দেশের বাইরে নিয়মিত ম্যাচ জয়ের মতো শক্তিশালী হবে।’
বিশ্ব ক্রিকেটে এখন শুধু ভাল খেললে আর দুই-একটি ম্যাচ জিতলেই হবে না। উন্নতি করতে হবে র্যাঙ্কিংয়েরও। যে জায়গাটিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে সব চেয়ে বেশি। এই র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি না হওয়ার কারণে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে। এমনকি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেই শঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে। তাই ভাল খেলা, জয় এ সবের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি করতে হবে র্যাঙ্কিয়েও। এই নিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘এটি খুবই কঠিন বিষয়, কারণ আমরা এখনও জানি না আমাদের কী আছে। আমরা যদি যথাযথভাবে অনুশীলন করি, দলের উন্নতির জন্য, দলের প্রতিটি সদস্যের উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি, তবে র?্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির বিষয়টি নিজে থেকেই হয়ে যাবে। আমার কাজ হবে খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ পারফর্ম নিশ্চিত করতে যারা কাজ করেন, তাদেরকে সমর্থন দেয়া। তাহলেই দল খুব ভালো করবে। শ্রীলঙ্কা এবং গত চার বছর অস্ট্রেলিয়াতে আমি তাই দেখেছি। আমি এর উপরই নজর দিচ্ছি।’
হাথুরুসিংহের সামনে অল্প সময়ে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়াতে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার বাংলাদেশের সঙ্গে দুই বছরের কোচিং ক্যারিয়ারও নির্ভর করছে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাল কিছুর জন্য। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে নিজের চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যতোটুকু শক্তি আছে, তা আরও দৃঢ় করাই হবে আমাদের কাজ। আমি দলের কারও সঙ্গে এখনও কথা বলিনি। গত চার বছর এ দলটিকে আমি খেলতেও দেখিনি। কারণ অস্ট্রেলিয়াতে তাদের খুব একটা যাতায়াত ছিল না। তবে ২০১০ সালের আগে শ্রীলঙ্কায় এই দলের অনেককে দেখেছি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছে। এখন প্রথম কাজ হলো- সেরা কম্বিনেশনটা বাছাই করে নেয়া এবং নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতে খেলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। ওই দেশের পরিবেশে খেলাটা, উপমহাদেশের জন্য দলগুলোর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমরা বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রস্তুতি নিই, তবে অনেকদূর যেতে পারবো। আপাতত আমার লক্ষ্য, বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে খেলা।’