চার বছর আগের সেই দুঃস্বপ্ন এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে বড় নগ্নভাবেই ফুটে উঠেছিল তাদের রক্ষণ-দীনতা। আর্জেন্টাইন রক্ষণকে বোকা বানিয়ে জার্মানির ৪-০ গোলের জয় এলোমেলো করে দিয়েছিল আর্জেন্টিনার সাজানো বাগান। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের ঘণ্টা তো বেজেছিলই, শেষ হয়ে গিয়েছিল কোচ হিসেবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা-অধ্যায়। অথচ সেবার দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত কী দুর্দান্ত ফুটবলই না খেলেছিল মেসি-তেভেজ-আগুয়েরোরা।
এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেই পুরোনো প্রশ্নটিই ঘুরে-ফিরে আসছে। বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগ যে দলটির, তাদের রক্ষণ কি আগের মতোই তাসের ঘর? ব্রাজিল বিশ্বকাপে বড় ফেবারিট হলেও কেবল রক্ষণভাগের ‘বদনাম’ই তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। আক্রমণভাগ না হয় বিশ্বের সেরা। কিন্তু নড়বড়ে রক্ষণভাগ কি আর্জেন্টিনাকে চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে দেবে?
আর্জেন্টিনা এবার নাকি তৈরিই হয়ে এসেছে। তারা জানে, জিততে হলে খালি আক্রমণ নয়, রক্ষণেও দৃঢ়তা দরকার।
ব্রাজিলের আর্জেন্টিনার বেস ক্যাম্প বেলো হরিজন্তের আকাশে-বাতাসে এবার খেলা করছে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস। মেসি নির্ভার। অথচ ২৭ বছর বয়সী এই মহাতারকার ওপর চেপে বসার কথা রাজ্যের চাপ। ফুটবলে সম্ভব-অসম্ভব প্রায় সব গৌরবের দেখা পেয়ে যাওয়া লিওনেল মেসি যে এখনো দেশকে এনে দিতে পারেননি বড় সাফল্য। এবার কি তিনি পারবেন?
অনুশীলন ক্যাম্পে দলের মুখপাত্র হয়ে সেই প্রশ্নগুলোরই উত্তর দিলেন আর্জেন্টাইন রক্ষণসেনা এজেকিয়েল গারাই, ‘আমাদের নিয়ে অনেক কথাবার্তাই হয়। একটি কথাই বলতে চাই, রক্ষণভাগের ভুলগুলো অতীতেই ফেলে এসেছি। ওসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। চাই সামনের দিকে তাকাতে।’
চিরদিনের ভঙ্গুর রক্ষণকে সাবেলা যে ঢেলে সাজিয়েছেন, সে কথাই সবাইকে জানাতে চাইলেন গারাই, ‘আর্জেন্টিনা সব সময়ই খুব আক্রমণাত্মক দল। তবে অন্যান্য প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনা করে নিজেদের রক্ষণটাকেও শক্ত-পোক্ত করতে হবে আমাদের। এ জন্য যা যা করার, সবকিছুই করে দেখাব আমরা।’
অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও মেসি নিজের কাজটা ঠিকই করে যাচ্ছেন। নিজেকে প্রস্তুত করছেন সমর্থকদের প্রত্যাশা মেটাতে। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লুকাস বিগলিয়াও জানালেন সেই কথাই, ‘চাপ মেসির কাছে কোনো সমস্যা নয়। আমাদের সবারই দায়িত্ব ওকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা। নির্ভার রাখা। যেন সে নিজের দায়িত্বটি পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে সমাধা করতে পারে।’
বিগলিয়াও গারাইয়ের সঙ্গে রক্ষণভাগের প্রশ্নে কণ্ঠ মিলিয়েছেন, ‘আমরা দারুণ আক্রমণাত্মক দল। কিন্তু এর মানে এই না যে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ দুর্বল। সবারই মনে রাখা উচিত যেকোনো আক্রমণের উত্সমূল কিন্তু রক্ষণভাগই।’
আর্জেন্টিনার রক্ষণ কতটা শক্তিশালী হলো, সেটি আগামী রোববারই বোঝা যাবে। বসনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মেসিদের বিশ্বকাপ অভিযান। সূত্র: এএফপি।