সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে নরেন্দ্র মোদির সরকারও আগের কংগ্রেস সরকারের মতো রাজ্যপাল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করল। বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস আমলে নিয়োগ পাওয়া রাজ্যপালদের ইস্তফা দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকজন রাজ্যপাল গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করেন।
রাজ্যপাল বদলের এই প্রক্রিয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস-বিজেপি কাজিয়া নতুন করে শুরু হয়েছে। বিজেপি এই উদ্যোগকে স্বাভাবিক বলে মনে করলেও কংগ্রেস বলছে, এটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। জবরদস্তি করে সরানো হলে কংগ্রেস মামলার পথেও যেতে পারে।
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল দিল্লি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তার আগেই নতুন সরকারে পছন্দের রাজ্যপাল নিযুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। মোদি সরকারের চাপে গতকাল উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল ভাঁওরলাল জোশি পদত্যাগ করেছেন৷ এ ছাড়া সরকার বদলের যে তালিকা তৈরি করেছে বলে খবর, তাতে অন্যদের সঙ্গে কেরালার রাজ্যপাল শীলা দীক্ষিত, আসামের জানকি বল্লভ পট্টনায়ক, পশ্চিমবঙ্গের এম কে নারায়ণন, রাজস্থানের মার্গারেট আলভা, মহারাষ্ট্রের কে শঙ্করনারায়ণ প্রমুখ রয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, কেরালার শীলা দীক্ষিত ইস্তফা দেবেন না৷ তেমনই শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের এম কে নারায়ণন ইস্তফায় রাজি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাকাকালে হেলিকপ্টার কেনাবেচার একটা কেলেঙ্কারিতে নারায়ণনের বিরুদ্ধি অভিযোগ উঠেছে।
কেন্দ্রে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপাল বদলের রীতি বেশ পুরোনো। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে এটা ব্যাপকতা লাভ করে। ১৯৯৯ সালে বিজেপি যাঁদের নিয়োগ দিয়েছিল, ২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে তাঁদের মধ্যে চারজনকে সরিয়ে দেয়। এই অপসারণের পর সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা হয়৷ ২০১০ সালে রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী নন। তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকারের খামখেয়ালে সরানো যায় না। মেয়াদ শেষের আগে কাউকে সরাতে হলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে। তবে রাজ্যপালদের বদলিতে বাধা দেননি সুপ্রিম কোর্ট।
সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশের ফলেই কংগ্রেস-বিজেপি কাজিয়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জানকিবল্লভ পট্টনায়ক অথবা হংসরাজ ভরদ্বাজ ইস্তফার কথা অস্বীকার করলেও শীলা দীক্ষিত ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, চাপের কাছে তিনি মাথা নোয়াবেন না।
এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির নেতা সুধীন্দ্র মিত্তাল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। রাজনাথ বলেছেন, তিনি হলে বিনা বাক্যে ইস্তফা দিতেন। এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার। মিত্তাল বলেন, যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কট্টর কংগ্রেসি। কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কেউ-বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
কংগ্রেস নেতা অম্বিকা সোনি, পি সি চাকো আবার বিজেপির বিরোধিতা করে বলেছেন, রাজ্যপাল হওয়ার পর কেউ আর রাজনৈতিক নেতা থাকেন না। তাঁরা রাজ্যের ও সংবিধানের রক্ষাকর্তা হয়ে যান।
রাজ্যপাল অপসারণের প্রচেষ্টায় বিজেপির নেতাদের পুনর্বাসনের প্রশ্নটি জড়িত। মোদির মন্ত্রিসভায় বিজেপির ৭৫ উত্তীর্ণদের স্থান হয়নি। এই প্রবীণদের জন্য রাজ্যপালের পদ উপযুক্ত। এঁদের মধ্যে মুরলি মনোহর জোশি, যশবন্ত সিনহা, যশোবন্ত সিং ও কল্যাণ সিং অন্যতম৷