আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ আশরাফুল

ashraful

যে আলো ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের, তার বিদায়টা হলো করুণ এবং কলঙ্কিত। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকায় টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছেন আট বছর। এ ছাড়া আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। গতকাল বিসিবির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কমিটি এই সাজা ঘোষণা করেন। আশরাফুলের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়েছেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিহাব জিসান চৌধুরী, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার কৌশল লোকুয়ারাচ্চি ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ল্যু ভিনসেন্ট। শিহাব চৌধুরীর সাজা হয়েছে ১০ বছর এবং জরিমানা করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। লোকুয়ারাচ্চির সাজা ১৮ মাস এবং ভিনসেন্টকে সাজা দেওয়া হয়েছে তিন বছর। সাজা পাওয়া ব্যক্তিরা আগামী ২১ দিনের মধ্যে রায়ের বিপক্ষে আবেদন করতে পারবেন। অভিযুক্ত ১০ ক্রিকেটার ও সংগঠকের মধ্যে শাস্তি পেয়েছেন চারজন এবং নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন ছয়জন। ২০০১ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আশরাফুল। যা ছিল টেস্ট ক্রিকেটের সর্ব কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি। মুত্তিয়া মুরলিধরন, চামিন্দা ভাসদের বিপক্ষে খেলেছিলেন আলো ছড়ানো ১১৪ রানের ইনিংস। এরপর ক্যারিয়ারে ৬১টি টেস্ট, ১৭৭ ওয়ানডে এবং ২৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দেশকে উপহার দিয়েছেন বহু জয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্ণময় এই ক্রিকেটার বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়টর্সের পক্ষে পাতানো ম্যাচ খেলেন। আকসু ও ট্রাইব্যুনাল কমিটির তদন্তের আগেই ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন আশরাফুল। স্বীকারোক্তির পরই তাকে সাময়িকভাবে সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। কাল ট্রাইবুন্যাল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সাজা ঘোষণা করে। গতকাল সাজা ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যায় ট্রাইব্যুনাল কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘আশরাফুলকে চারটি অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’ আশরাফুলের বিপক্ষে আনীত অভিযোগগুলো চিটাগাং কিংস, খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, বারশাল বারনার্স এবং সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতিয়েছেন। সাজার বিপক্ষে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল, ‘ট্রাইব্যুনাল কমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে কাগজপত্র পাঠাবে। কাগজগুলো আমার দুই আইনজীবী ইয়াসিন প্যাটেল ও খালেদ হামিদ চৌধুরী পর্যালোচনা করবেন। এরপরই সিদ্ধান্ত নিব। তবে আমি আবেদন করব।’ আশরাফুলকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে চিটাগাং কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। আট বছরের শাস্তি হলেও মূল সাজা পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছর সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ আশরাফুল। এই সময়ে মধ্যে তাকে আইসিসি, বিসিবি ও এসিসির সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। যদি কাজে সন্তুষ্ট হয় বিসিবি, তাহলে বাকি তিন বছর সাজার মেয়াদ বাতিল করা হবে।

অবশ্য আশরাফুলের সাজার মেয়াদ এরমধ্যেই এক বছর পার হয়ে গেছে। স্বীকারোক্তির পর থেকেই মেয়াদ শুরু হয়েছে আশরাফুলের সাজা।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সব ধরনের কার্যক্রমে জড়িত থাকায় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিহাব চৌধুরীকে ১০ বছর এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। পাতানো খেলায় জড়িত থাকার কথা নিজ থেকে স্বীকার করায় ভিনসেন্টকে তিন বছর এবং ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার পরও সেটা না জানানোয় দেড় বছর সাজা দেওয়া হয়েছে লুকারাচ্চিকে। বিশেষ ট্রাইবুন্যালের রায় সম্পর্কে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘ডকুমেন্টস পাওয়ার পর আমরা আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও আইসিসির সঙ্গে কথা বলব। এরপর আমরা ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে মন্তব্য করব। তার আগে নয়।’

আশরাফুলকে নিষিদ্ধ করার দিনটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কালো দিন। এর আগে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। বছর ছয় আগে আইসিএল (ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ) খেলার জন্য নির্বাচক হাবিবুল বাশারসহ ১৪ ক্রিকেটারকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরে অবশ্য সেটা কমিয়ে আনা হয় এবং সবশেষে মাফ করে দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটারদের।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *