খ্যাতিসম্পন্ন ল‘ফার্ম হলবর্ণ চেম্বারর্স অয়োজিত সেমিনারে বৃটিশ আইনজীবীরা বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। গনতন্ত্র বন্দী বুলেটের নিশানায়।  এই অবস্থা চলতে পারেনা। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য তারা লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন। বৃহষ্পতিবার দ্যা অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন এ আয়োজিত “এওয়ারনেস এন্ড ওয়ার্নিং এব্যাউট বাংলাদেশ“ শীর্ষক সেমিনারে বৃটিশ আইনজীবীরা এসব কথা বলেন।  সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হলবর্ণ চেম্বারের প্রধান এবং মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট  স্টিভেন্স। সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার এ্যান হোওস, ব্যারিস্টার এস কে কুমার, ব্যারিস্টার ডেভিড রেকটার, বৃটিশ বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর এ কে এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার আয়েশা কোরেশী, ব্যারিস্টার টি আই এম ওয়েলচ, ব্যারিস্টার ক্রিস্টিলি, ব্যারিস্টার ফ্রাংকো, ব্যারিস্টার মারিয়া গঞ্জালেস, ব্যারিস্টার এ. গ্যালাহার এবং বৃটিশ বাংলাদেশী ব্যারিস্টার হুসেইন শামসুজ্জোহা।
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে এই সরকারের নেতা মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে বৃটেনের কোন ব্যবসা বানিজ্য থাকলে তার উপর অবিলম্বে অবরোধ আরোপের দাবী জানান। প্রয়োজনে তাদের বৃটেনে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহবান জানান। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেন আইজীবীরা।
বিশ্বে গনতন্ত্র সু‘শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার এই আইনজীবীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার জন্য গনমাধ্যমের প্রতি হুমকী ধামকী প্রমান করে দেশটিতে গনতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই। ব্যারিস্টার এ্যান হোওস বলেন, তারেক রহমান সরকারের পক্ষ থেকে প্রমানহীন অভিযোগ, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ব্যারিস্টার এ্যান হোওস বাংলাদেশের গনমাধ্যম সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর সরকারের অত্যাচার, সাগর-রুনীর হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা শুণ্যের কোঠায়।
মুল প্রবন্ধে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স বলেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করছে আইনশৃংখলাবাহিনীকে। দেশটির বিশেষ বহিনী র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব এখন জনগণের কাছে খুনী বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা র‌্যাবকে অবিলম্বে বিলুপ্তির দাবী জানান। একইসঙ্গে র‌্যাব সম্পর্কে বৃটিশ সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করারও দাবী জানান তিনি।
৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে হাস্যকর নির্বাচন উল্লেখ করে ব্যারিস্টার স্টুুয়ার্ট বলেন, ওই নির্বাচনে একজন এমপি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি নিজেই জানেন না কিভাবে তিনি এমপি হয়েছেন। এরচেয়ে হাস্যকর নির্বাচন আর কি হতে পারে? ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট বলেন, যেই নির্বাচনে জনগনের অংশগ্রহন নেই সেই নির্বাচন বৈধ হতে পারেনা। সেই সরকারও বৈধ হতে পারেনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গনতন্ত্র ও আইনের শাসন  দু‘টিই অনুপস্থিত। এমন একটি নির্বাচন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের কাছেও গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।  হাউজ অব কমন্স, মার্কিন সিনেট এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ওইসব শুনানী শেষে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার এইসব আহবানকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা ও গুম খুন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বলেও অভিয়োগ  করেন ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট। তিনি এ ব্যপারে বৃটিশ সরকারকে বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে দেশটিতে আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেনা, বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়, এমনকি দলীয় আনুগত্যের কারণে খুনের আসামীকেও বিচারক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে আইন পেশায় জড়িত তাদের অনেকেই বৃটেনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তারা তাদের আইনী কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়ায় দলীয় আনুগত্যের উর্দ্ধে উঠে জুডিশিয়ারিকে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেয়ে জনগনের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সচেষ্ট  হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য দেয়ার যুক্তিসংঙ্গত অধিকার রয়েছে। কারণ গনতন্ত্রহীনতা এবং সুশাসনের অভাব হলে এর প্রভাব উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বৃটেইনের উপর পড়ে। তিনি বলেন, এ কারণে বৃটেইনেরও উচিৎ এমন পদক্ষেপ নেয়া যাতে বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশেই নিরাপদে থাকতে পারেন। দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, প্রতিষ্ঠিত হয় গনতন্ত্র ও আইনের শাসন। সেমিনারে বৃটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার আশরাফ আরেফিন, এডভোকেট লিয়াকত আলী, এডভোকেট মাহমুদ হাসান ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য শামীম চৌধুরী।