ফেনীতে ছয় মাসে ৩০ খুন

ফেনীতে গুম, খুন ও অপহরণ বেড়েই চলছে। গত ছয় মাসে জেলায় ৩০ জন খুন হয়েছে। শুধু তাই নয়, দিনদুপুরে মানুষ পুড়িয়েও হত্যা করা হয়েছে। আগের যে কোনো সময়ের চাইতে এখন বেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এ জনপদে।

এক সময়ের অশান্ত ফেনী কিছুদিন শান্ত থাকলেও আবার পুরোনো চিত্র ফুটে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এসবের শিকার হওয়ায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।

খুনের পাশাপাশি অজ্ঞাত লাশের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। ছয় মাসে অন্তত ১০টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে ফেনী জেলাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় অধিক গুরুত্ব বহন করে।

অন্যদিকে ভিন্ন জায়গায় দুর্বৃত্তরা খুন করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে মহাসড়কের আশপাশে ও ফেনীর বিভিন্ন স্থানে লাশ রেখে পালিয়ে যায়। এতে করে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং অজ্ঞাত লাশের পরিচয় মিলছে না।

গত ২০ মে প্রকাশ্য দিবালোকে শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতে ৪ জুন সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করে নিজ দলীয় কর্মীরা।

৬ জুন ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের পোস্ট মাস্টার মাহবুবুল হককে (৫০) রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৭ জুন সাউথ ইস্ট কলেজ পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ জুন ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের যুবলীগ কর্মী হামিদুর রহমান জিয়া (২৮) কে খুন করে দলীয় কর্মীরা।

মে মাসে পরশুরামে গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তার (২২) সহ ছয় জন খুন হয়। ১৯ এপ্রিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুহুরীগঞ্জ ফিলিং স্টেশনের সামনে যুবদল নেতা শাহীনুল আলম সুমনকে (২৭) এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে চলন্ত গাড়ির নিচে ফেলে দেয়া হয়।

kill-fany-SwadeshNews24১৪ এপ্রিল দেওয়ানগঞ্জ রেল ক্রসিং সংলগ্ন স্থান থেকে শহীদুল ইসলাম নামের এক যুবলীগ কর্মীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ এপ্রিল রাতে শহরের পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন ভূঞা বাড়ির সামনে রামপুর নজির আহম্মদ সওদাগর বাড়ির অধ্যাপক এম. এ খায়েরের ছেলে ব্যবসায়ী কায়সার মাহমুদকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে স্ত্রী নাদিয়াসহ তার সহযোগীরা। একই দিন দাগনভূঞা উপজেলার করমুল্লাপুর গ্রাম থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

৯ এপ্রিল একই উপজেলার একই গ্রামে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ওসমান গণি ও সাহাব উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ১২ এপ্রিল ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মধুগ্রাম ছালেহ আহম্মদের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে মো. ছিদ্দিকুর রহমান নামের এক দিনমজুরের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

৩ এপ্রিল ফেনী-মাইজদী সড়কের কাশিমপুরে প্রাইভেটকার ছিনতাই করতে এনামুল হক স্বপনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৫ মার্চ লেমুয়ার যুবদল নেতা কালামের মস্তক বিহীন লাশ কালিদাস পাহালিয়া নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। কালামসহ মার্চ মাসে তিনটি খুন হয়।

এছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ও জানুয়ারি মাসে পাঁচজন খুন হয়। সবচেয়ে বেশী খুন হয় এপ্রিল মাসে। ১০ জন।

অপরদিকে ২০ মার্চ রাত ৩টার দিকে শহরের পাঠান বাড়ির রোডস্থ বাসা থেকে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনকে অপহরণের তিন মাস পার হলেও এখনো তার কোনো হদিস মিলেনি। তার পরিবারের অভিযোগ রিপনকে র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। তাকে ফিরে পাওয়ার প্রহর গুনছে তার স্বজনরা।

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল হক জানান, উল্লেখিত ঘটনায় জড়িত অনেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *