কুমিল্লা-৬ (সদর) সংসদীয় আসনের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার আহমেদ আর নেই। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঢাকার সমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আনসার আহমেদের বড় ছেলে আঞ্জাম আনসার বাজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আনসার আহমেদের মরদেহ শুক্রবার পর্যন্ত সমরিতা হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।
বাজু বলেন, আমার বড় বোন রিফাত আনসার সুমি ও ছোট ভাই সেজান আনসার অভি আমেরিকা প্রবাসী। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে তারা দেশে ফিরবেন।
২৭ জুন শুক্রবার বাদ জুমা কুমিল্লার মোগলটুলীতে আনসার আহমেদের নিজ বাড়িতে তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে বলেও তিনি জানান।
কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট কংগ্রেস সংগঠক, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা প্রয়াত হাজী তারু মিয়ার তৃতীয় ছেলে আনসার আহমেদ ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
জাতীয় পার্টির এই নেতা দুইবার সংসদ সদস্য হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
ব্রেন স্ট্রোকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে সোমবার (২৩ জুন) সকালে তিনি ঢাকার সমরিতা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। এর ছয় মাস আগে একই কারণে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ছয় মাসের চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সোমবার সকালে পুনরায় ব্রেন স্ট্রোক হয় আনসার আহমেদের। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে সমরিতা হাসপাতালে স্থানান্তর করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ব্রেন স্ট্রোক ছাড়াও এর আগে আনসার আহমেদের ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছিল। তিনি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন।
আনসার আহমেদের ছোট ভাই সমাজ কর্মী জহির আহমেদ জানান, বাবার পথ ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন আনসার আহমেদ। ১৯৬৫ সালের দিকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এরপর ছাত্রলীগে যোগদান করেন ১৯৬৯ সালে। ওই বছরই ছাত্রলীগের বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ওই সময়েই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৬৯-এ ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ১৯৭০-এর নির্বাচনেও। পরবর্তীকালে ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে সেখানেও রাখেন অনবদ্য ভূমিকা। যুদ্ধের সময় ভারতের মেলাঘরে অবস্থিত ইয়ুথ ক্যাম্পের পলিটিক্যাল মটিভেটরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ওই সময়েই আনসার আহমেদ নিজের তত্ত্বাবধানে সাপ্তাহিক প্রতিনিধি নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন। স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনের কাজেও যোগ দেন তিনি।
তার সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল জানান, স্বাধীনতার পরপরই দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে আনসার আহমেদকে। পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন অঙ্গ সংগঠন জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
এই দলে গিয়ে ’৮৬ ও ’৮৮ সালে সংসদ সদস্য হন তিনি। আনসার আহমেদ পরে ১৯৯০ সালে কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নয় মাস দায়িত্ব পালন করেন।