বিশ্বকাপের দেশ ব্রাজিল থেকে প্রায় ৯০৫৯ মাইল দূরে ঢাকার এক সাধারণ গলিতে তৈরি হলো সেদিন এক অসাধারণ ইতিহাস। তৈরি হলো ‘ওয়ার্ল্ড কাপ গোল-ই’। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল ফুটবলপাগল বাংলাদেশিদের, যাদের কাছে দূরত্ব কোনো বাধাই নয়।
ভালোবাসার আনন্দে গলির আশেপাশের বাড়িঘর, দেয়াল, রাস্তাঘাট রঙতুলি আর স্প্রে রঙের পরশে রঙিন হয়ে উঠল খেলোয়াড় আর ফুটবল মোটিফের সাজে। গলির ওপরের আকাশ ছেয়ে গেল ৩২টি দেশের রঙিন পতাকায়। গাছে গাছে আর ইলেকট্রিক তারে ঝুললো নানা রঙের ফুটবল। সেই রঙিন সাজ দেখতে হাজির হলো পুরান ঢাকার হাজার হাজার মানুষ, বিভিন্ন বাড়ির জানালা-বারান্দা দিয়ে উঁকি দিল গৃহিণীর হাসিমুখ। তরুণ-তরুণীরা নেমে এল রাস্তায়। শাকিরার বিশ্বকাপ সংগীত ‘লালা লা লা’র সঙ্গে গাইল আর নাচল দিনভর।
বিশ্বকাপ গোল-ই এর অন্যতম উদ্যোক্তা ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের সাবহানাজ রশীদ দিয়া জানালেন কেন এই উদ্যোগ, ‘সারা পৃথিবী ফুটবল নিয়ে মেতে আছে নানান অনুষ্ঠানে। আর আমরা শুধু প্রিয় দেশের পতাকা ওড়ানো আর আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল নিয়ে মারামারি করব? তখনই মনে হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তো গ্রাফিটি (দেয়ালচিত্র) হয়। আমাদের পুরান ঢাকার একটি গলিতে গ্রাফিটি করে ফেললে কেমন হয়?’
বিশ্বকাপ গোল-ই এর আরেক উদ্যোক্তা তামজিদ সিদ্দিক জানালেন, ‘আমাদের বন্ধুবান্ধব, এলাকাবাসীসহ অনেকেই, যারা কোনো দিন তুলি হাতে ধরেনি, সেদিন তুলি দিয়ে দেয়াল রং করেছি, গানের তালে সারা দিন নেচেছি। বিশ্ববাসীকে দেখাতে চেয়েছি, আমরা বিশ্বকাপে খেলছি না তো কী হয়েছে, নিশ্চয়ই একদিন খেলব। আমরা সবাই ফুটবল ভালোবাসি। আমরা আমাদের বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’
পুরান ঢাকার এই গলিটি একই রকম রঙিন থাকবে বিশ্বকাপজুড়েই। পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পাশ দিয়ে যে গলিটি ঢুকে গেছে সেখান দিয়ে একটু এগোলেই পাবেন গলিটি। চাইলে আপনিও দিনের যেকোনো সময় সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ঝলমলে রঙিন ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করে পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিতে পারেন, ‘আমরাও কিন্তু কম ফুটবল পাগল জাতি নই।’